করোনাভাইরাস: মধ্যবয়সীদের ঝুঁকি বেশি

⇒ আক্রান্ত প্রায় সবার নিউমোনিয়া দেখা দেয়।
⇒ডায়াবেটিসের রোগীদের ঝুঁকি বেশি।
⇒বাদুড় এর কারণ হতে পারে।

নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড় বয়স ৫৫ বছর। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ বেশি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। ভাইরাসের জিন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে।

নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে করা পৃথক কিছু গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চীনের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা এসব গবেষণা করেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট-এ তাঁদের পৃথক ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে।

চীনের উহান জাইনিনতান হাসপাতালে ১৪ বছরের বেশি বয়সীদের চিকিৎসা হয়। এই হাসপাতালে ১ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি হওয়া ৯৯ জন রোগী নিয়ে গবেষণা করেছে একটি দল। রোগীদের প্রত্যেকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে পুরুষ ছিল ৬৭ জন, আর নারী ৩২ জন। গবেষকেরা রোগতাত্ত্বিক, জনমিতিক, চিকিৎসাসংক্রান্ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসংক্রান্ত, ব্যবস্থাবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

ওই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোগীদের গড় বয়স ছিল ৫৫ দশমিক ৫ বছর। ৫০ শতাংশ রোগীর অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ ছিল। এঁদের মধ্যে জ্বর ও কাশি ছিল যথাক্রমে ৮৪ ও ৮২ শতাংশের। ৩১ শতাংশের ছিল ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা। অন্যদিকে ৭৪ শতাংশের নিউমোনিয়াও দেখা দিয়েছিল। গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা পুরুষদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

রোগের লক্ষণ বোঝার জন্য ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি হওয়া ৪১ জন রোগীকে নিয়ে আরেকটি গবেষণা হয়েছে। রোগীদের মধ্যে ৩০ জন ছিল পুরুষ। তাদের ২০ শতাংশের ডায়াবেটিস, ১৫ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ ও ১৫ শতাংশের হৃদ্‌রোগ ছিল।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯৮ শতাংশের জ্বর ও ৭৬ শতাংশের কাশি ছিল। ক্লান্তি ও অবসাদ ছিল ৪৪ শতাংশের। এক্স-রেতে দেখা যায়, ৪১ জন রোগীর প্রত্যেকেরই নিউমোনিয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৩ জন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ছয়জন মারা যায়।

পৃথক অন্য একটি গবেষণা প্রবন্ধের ভূমিকায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ইতিহাস বলা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ২০০২ সালের নভেম্বরে চীনে দেখা দেওয়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস। ২০০২-০৩ সালের মধ্যে ৩৭টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে ৮ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়, আর মারা যায় ৭৭৪ জন। ২০১২ সালে সৌদি আরবে প্রথম মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস শনাক্ত হয়।

এই গবেষকেরা চীনের উহান প্রদেশে উৎপত্তি হওয়া নতুন করোনাভাইরাসের ধরন জানতে জিন বিশ্লেষণ করেছেন। ৯ জন রোগীর লালা থেকে তাঁরা ভাইরাস সংগ্রহ করেন। গবেষকেরা বলছেন, বাদুড় ছড়ায় এমন করোনাভাইরাসের সঙ্গে নতুন এই ভাইরাসের ৮৮ শতাংশ মিল আছে।

এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বা বহু লোক আক্রান্ত হচ্ছে এমন খবর প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে। তবে কত দ্রুত ছড়াতে পারে, তারও একটি গবেষণা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ‘২০১৯ এনসিওভি’-এর সংক্রমণ ক্ষমতা ২ দশমিক ৬৯। অর্থাৎ আক্রান্ত একজনের মাধ্যমে আরও প্রায় তিনজনের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। ওই গবেষক দল বলছে, ওই সময়ে উহান শহরে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির অনুমিত সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮১৫।

ওই এক মাস সময়ের মধ্যে কত সংখ্যক সংক্রমিত ব্যক্তি উহান শহর থেকে বেইজিং, সাংহাইসহ পাঁচটি বড় শহরে গেছে, তারও একটি অনুমিত হিসাব দিয়েছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা বলছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে বড় উদ্যোগ না নিলে ওই সব শহরেও স্থানীয়ভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে, যা মহামারির আশঙ্কাকে দ্রুততর করবে।

 

 

সুত্র-প্রথম আলো

 

 

আরো পড়ুন-ঝিনাইদহে শান্তিপূর্ণ ভাবে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত