করোনায় ভয়াবহ অবস্থানে নিউইয়র্কের কুইন্স শহর

করোনা আতঙ্কে যখন সারা বিশ্ব এর ব্যাতিক্রম নয় নিউইয়র্কের কুইন্স শহর। প্রতি মূহুর্তে বিশ্বের আনাচে কানাচে হানা দিচ্ছে মহামারি করোনাভাইরাস। এরমধ্যে করোনার থাবা পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকাতেও। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে মৃত্যুর তালিকা। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাধর এ রাষ্ট্রটি।

জানা গেছে, আমেরিকার ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে নিউইয়র্ক রাজ্যে। ইতোমধ্যে শুধু নিউইয়র্কেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৮ জনের।

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি জানান, এখানে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা অনেক, কিন্ত সবাই নিরব, কাউকে বুঝতে দিচ্ছেনা। তাই সবাই বাসাতে খুব সাবধানে সাথে অবস্থান করছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে আগের তুলনাই মৃত্যুর সংখ্যা কমছে।

তিনি আরও জানান, এই মুহুর্তে রাত ১১:১০ নিউইয়র্কে আক্রান্ত ১,৩৩,৯৬৫ জন। মারা গেছেন ৪,৮৮৯ জন। আমেরিকায় গতকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ৩,৭৭,৬০৫ জন। মারা যাওয়ার সংখ্যা ১১,৭৮৪ জন। নিউইয়র্ক শহরে এ যাবত বাংলাদেশি মৃতের সংখ্যা ৮২ জন এ দাঁড়ালো। তুলনামূলক হারে বেশী।

এলমহার্স্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোভিড-১৯ রোগীর জায়গা নেই। একটু পর পর কোড ৯৯ ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয় অন্তিম মুহূর্তে রোগীকে শেষ দাওয়াই দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকার উদ্দেশ্যে। বিশৃঙ্খলা বিহীন হাসপাতালে কারো কোন অভিযোগ নেই।

সিএনএন, সিবিএস, ফক্স ইত্যাদির সাংবাদিকরা এই ভয়াবহ সময়ে হাসপাতালের কর্মীরা কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তার অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য সেখানে গিয়ে সিএনএন প্রতিনিধিরা রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান।

হাসপাতালের ডা. সিএনএনকে বলেন, ‘তারা এতই অসুস্থ যে, চোখের পলকেই তারা মারা যেতে পারে। তারা হয়তো কথা বলছিল। কিন্তু কয়েক মিনিট পরই তাদের কণ্ঠনালি দিয়ে টিউবব ঢোকাত ঢোকাতে এই প্রার্থনা করতে হবে যে, এই ভেন্টিলেটর যেন তাদের সাহায্য করতে পারে।’

এই একই পরিস্থিতি এখন বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের সব হাসপাতালে। হাসপাতাল গুলোয় রোগীদের বাইরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের বাইরে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব কম লোকই জানে।

বর্তমানে এলমহার্স্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছাড়া আর কোনো রোগী নেই। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর নির্দেশে যে তিনটি হাসপাতাল শুধু করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে, এটি তার একটি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে এখনকার চেয়ে বেশি রোগী এলেও এতটা আতঙ্ক তৈরি করেনি।

কারণ, এখন হাসপাতালটিতে আসা সব রোগীই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। উপরন্তু জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের অবস্থা গুরুতর এবং এদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেশি। হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া কোভিড-১৯ রোগীদের ২৫ শতাংশই মারা গেছে। এত উচ্চ হার দেখে অন্য সময় হলে হাসপাতালের সেবা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেত। কিন্তু এখন এ প্রশ্ন উঠছে না।

এ বিষয়ে ড. লরেঞ্জো প্যালাডিনো সিএনএনকে বলেন, ‘হাসপাতাল নয়, রোগের প্রকৃতির কারণেই এমন ঘটছে। অন্য কোনো রোগ নেই। অন্য কোনো ভাইরাস নেই। একের পর এক রোগী আসছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই।’

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেখা গেল একজন স্বাস্থ্যকর্মী মাত্রই মারা যাওয়া একজনকে এনে রেখেছেন। পলিথিনে মোড়া সেই মরদেহের কোনো অস্তিত্ব ৩০ মিনিট পর আর দেখা গেল না। তখন সেখানে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছেন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে এসে দেখা গেল, আরেকজন রোগী মুখে মাস্ক পরে বসে আছেন। ভীষণ কাশছেন। একপর্যায়ে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হলো।

হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া প্রায় ৪০০ কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ৯০ শতাংশেরই বয়স ৪৫ বছরের বেশি। ৬০ শতাংশের বেশি রোগীর বয়স ৬৫ বছরের বেশি। সবচেয়ে কম বয়সী রোগীটির বয়স ৩ বছর। ২০ বছরের আশপাশে বয়স এমন তরুণের সংখ্যাও কম নয়। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ জন রোগী মারা গেছেন।

এলমহার্স্ট হাসপাতালের দৃশ্য বাইরের পৃথিবী থেকে একেবারেই আলাদা। বাইরের পৃথিবীতে যখন চলছে, ঘরে থাকার নিয়মের কড়াকড়ি, তখন এখানে কিছু হই-হল্লার দেখা মিললেও, তার সবই হৃদয় ছিঁড়ে দেওয়া। এখানে প্রাণ কাতর ধ্বনিই একমাত্র কোলাহল। আর বাকি সব কোলাহল ঘরের চার দেয়ালে আটক। এই কোলাহল ও নিস্তব্ধতা যেন যুদ্ধ সময়ের আবহ তৈরি করে রেখেছে।

হাসপাতালের ডা. রা বলেন, ‘এই যে জরুরি বিভাগ। এখানে এখন যে ধরনের কাজ চলছে, তা কোনো বিধ্বস্ত নগরী বা ভয়াবহ দুর্যোগের সময়ে চলার কথা।’