করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন নারী বাতায়ন ও চেতনা

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গের কারণে বেশিরভাগ রোগী শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমানে অনেক রোগী হাসপাতালসহ নিজ বাড়িতেই চিকিৎসকের পরাপর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। এ অবস্থায় অনেক করোনা রোগীর হঠাৎ করেই দেহের অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বুঝে ওঠার আগেই রোগী অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মৃত্যুবরণও করছেন। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর স্বজনরা যদি বুঝতে পারেন তবে রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে তাকে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার চেতনা নামের একটি সংগঠন। স্থানীয় কিছু বন্ধুরা মিলে এ সংগঠনটি সামাজিক নানান কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত।

তবে এই মহামারী করোনাকালীন সময়ে হাউজিং এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অক্সিজের প্রয়োজন পড়লো। ঠিক সেই মুহুর্ত্বে কি করা যায় এমন ভাবনা থেকেই স্থানীয় নারী বাতায়ন সংগঠনের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনীর সাথে আলাপচারিতায় মুহুর্ত্বের নারী বাতায়নের পক্ষ থেকে কিছু মাস্ক ও দুইটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরহ করলো। এভাবেই পথচলা শুরু।

অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হলো জেলখানার মোড়ে স্বপন আলমের ফার্মেসীতে। যখন যার প্রয়োজন পড়বে তখনই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাবে। এভাবেই পরবর্তীতে নারী বাতায়ন আরও দ্ইুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার পর এভাবেই স্থানীয়দের সহযোগীতায় এখন এ সংগঠনের মোট ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার গোটা হাউজিং এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আছে।

করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রাত-বিরাতে প্রাপ্তি কিন্ত সহজ কাজ নয়।শহরের অধিকাংশ পরিবার যখন করোনা সংক্রমণের আশংকায় নিজেদের নানা কাজ থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল তখনও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে চলেছেন নারী বাতায়ন ও চেতনা নামের সংগঠন।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে তীব্র যাতনায় বাড়িতে কাটাতে হয়েছে। এমন একজনের স্বজন জানান, করোনা আক্রান্ত হবার পর তার বোনের জন্য নারী বাতায়ন ও চেতনা সংগঠনের সরবরাহ করা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল তার জন্য এক আশীর্বাদ।

কয়েকদিন আগে রাত ২টার সময় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নাসিম নামের একজন ফোন করে জানালো তার বোনের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৫ হয়ে গেছে। তখন আমি চেতনা সংগঠনের শিশিরকে ফোন করলে সে আবার তাৎক্ষনিকভাবে স্বপন আলমকে বিষয়টি জানালে আবার গভীল রাতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাপোর্ট দিয়েছে। একঘণ্টা সাপোর্ট নেবার পরে আমার বোনের স্যাচুরেশন ঠিক হয়েছে। এই সার্ভিসটা এতো রাতে ঘরে বসে যে পেয়েছে একমাত্র সে-ই জানে এটা কতটা দরকার,।

বিষয়টি নিয়ে স্বপন আলম বলেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পর থেকে গত দুই মাসে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কোভিড১৯ রোগীর জন্য তিনি অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন।

পরিবারের মধ্যেও প্রথম দিকে উদ্বেগ ও অস্বস্তি ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা কেটে গেছে। তিনি বলেন, ” এ কাজটা করতে অনেক সাহস লাগে। অনেকে ভয় পাবে এই কাজ করতে। প্রথম দিকে কেমন কেমন মনে হলেও কিন্তু এখন অনেক ভালো লাগে। “একটা সিলিন্ডার যখন একটা বাসায় যায় তখন সেটা ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করলেই কাজ শেষ হচ্ছে না। অনেকের এক সপ্তাহ কিংবা ১৫দিনও লাগে। অনেকে ফোন করে প্রতিদিন। কিন্তু সিলিন্ডার কম হওয়ায় আমরা সবাইকে এ সেবা দিতে পারি না,” বলেন স্বপন আলম।
চেতনার আরেক সদস্য তানভীর শিশির বলেন, “যারা হাসপাতালে যেতে পারছিল না সেই সব রোগীদের আমরা অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া শুরু করলাম।

শুধু একটু সদিচ্ছা প্রয়োজন মানুষের পাশে থাকার জন্য, আমাদের উদ্যোগ ও ভালো কিছু করার ইচ্ছায় যথেষ্ট অনেক কিছু করার জন্য।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর থেকে বাংলাদেশের হু-হু করে বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম। যে সিলিন্ডার এক সময় পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যেতে সেটির দাম গিয়ে ঠেকেছে ১৬ হাজার টাকায়।

ফলে অক্সিজেন সরবরাহ করার খরচও বেড়ে গেছে কয়েক গুন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা জোগাড় করে এখন পর্যন্ত ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে। ধন্যবাদ সকলকে ,ধন্যবাদ বন্ধুদের, এই মহামারিতে সবার পাশে দাঁড়াবার জন্য। ইনশাআল্লাহ্, আমাদের সকলের মহানুভবতায় মহামারীকে আমরা পরাজিত করবোই।

নারী বাতায়ন সংগঠনের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনী বলেন, মহামারির শুরু থেকে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণের পাশাাপশি কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ বিতরণ করছিলেন নারী বাতায়ন ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে এসে রোগীদের জন্য বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু করেন। তব হাউজিং এলাকায় চারটি সহ বিভিন্ন এলাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যহত আছে। হাউজিং এলাকায় রাত-বিরাতে রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ১০০’র বেশি রোগীকে এই সেবা দিয়েছেন সংগঠন দুটো।

রোগীদের অনেকেই বলছেন, আমাদের হাউজিং এলাকার মানুষের করোনায় যখন সমস্যা হয়, তখন সে কঠিন দু:সময়ে এই অক্সিজেন সেবা অনেকের জীবন বাঁচিয়েছে।