করোনা শহিদের কাঁধে তুলে দিয়েছে সংসার ভার

পরিবারের পাঁচ সদস্যের ছোট ছেলে শহিদ বিশ্বাস (৯)। বড় ভাই হৃদয় বিশ্বাস (১২) উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের অমৃতনগর জান্নাতুল উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। আর বোনের বয়স সাত মাস। এই বয়সে শহিদের কাঁধে সংসারের হাল। করোনায় স্কুল বন্ধ, সংসারেও অভাব। তাই সংসারের অভাব দূর করতে ৯ বছর বয়সেই ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালায় শহিদ।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বোয়ালমারী পৌরসভার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রায়পুর (চরপাড়া) গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শহিদ বিশ্বাস। কোনো সময় তাকে পৌর বাজারের চাটাইপট্টি, ওয়াবদামোড়, গুনবহার তালতলা আবার কোনো সময় চৌরাস্তার বাসস্ট্যান্ডে ভ্যান নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। আজ শনিবার দুপুরের দিকে পৌরসভার চৌরাস্তার লোকাল বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী নামাতে দেখা যায়।

এ সময় শহিদ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সে প্রতিদিন একবেলা ভ্যান চালায়। বাবা যে দিন সকালে ভ্যান চালায় সে সে দিন বিকেলে ভ্যান চালায়। তার বাবা আবার রান্নার (বাবুর্চি) কাজ করেন। বাবা যে দিন রান্নার কাজে যান, সে দিন দিনভর তার ভ্যান চালাতে হয়। তাই সংসার চালাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালাতে হয় তার। করোনাভাইরাসের কারণে তেমন ভাড়া হয় না। যা আয় হয় কোনোমতে তাদের সংসার চলে।

শহিদ বিশ্বাসের বাবা আবুল হোসেন মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। সরকারি ওয়াবদার জায়গায় ছাপড়া ঘর তুলে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছি। আগে রান্নার কাজ করে মোটামুটিভাবে সংসার চালাতাম। কিন্তু করোনাকালে বড় কোনো অনুষ্ঠান না হওয়ায় রান্নার কাজও নেই। বড় ছেলে হৃদয়কে (১৩) হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করাচ্ছি। সংসারে সে কোনো সহযোগিতা করতে পারে না। এ জন্য ছোট ছেলে ভ্যান চালিয়ে আমার সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করে। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি অসহায়দের জমি ও ঘর দিচ্ছেন। কেউ যদি এগুলো দিয়ে সহযোগিতা করতেন তাহলে মাথা গুজার ঠাঁই পেতাম’।

বোয়ালমারী পৌর মেয়র সেলিম রেজা লিপন মিয়া বলেন, মাত্র দুই মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। শুনেছি শহিদ বিশ্বাসের পরিবারের কথা। তাকে পড়ালেখা করাতে যা যা প্রয়োজন সহযোগিতা করা হবে। তার পরিবারে যদি কোনো ঘর বা জায়গা না থাকে তাহলে আবুল হোসেনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।