“কাঁদা মাড়িয়ে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের ঝোরপাড়া গ্রামের সহাস্রাধিক মানুষকে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাসের বাণী মিলেছে বহুবার, কিন্তু মেলেনি একটি পাকা রাস্তা।” জানা গেছে, “দীর্ঘদিন ধরে মাত্র চার কিলোমিটার সড়কটি পাকাকরণের দাবিতে জনপ্রতিনিধি ও গাংনী উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রামবাসি।
কিন্তু আশ্বাসেই আটকে আছে ঝোরপাড়া গ্রামের রাস্তা উন্নয়নের সেই প্রতিশ্রুতি। ঝোড়পাড়া গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ রাস্তার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ”কাঁদার কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না এই গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী। ফসল ঘরে তুলতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। এলাকাবাসির জানান, রাস্তাঘাটের এই দুরবস্থার কারণে অসুস্থ মানুষকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।”
দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে ঘুরে কোনো কাজ হয়নি তাদের। একারণে “আজ শুক্রবার বিকেলে একটি পাকাপাকা রাস্তার দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। এসময় প্রতিবাদ জানাতে সড়কের ওপরেই ধান রোপণ করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, আমরা বারবার বলছি, ধর্ণা দিচ্ছি, কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি এই রাস্তায় হাঁটাচলা করা আমাদের জন্য একেবারেই কষ্টকর।” ঝোড়পাড়া গ্রামের সায়েম হোসেন বলেন, “আমরা বারবার ধর্ণা ধরেছি কোনো কাজ হয়নি। রাস্তা না হওয়ার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি পাকা করণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে জরিপ করে একটি আইডি (যার নং ২৫৭৪৭৫২২৬) অথচ, রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তৎকালিন সময়ে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের এমপি ও স্থানীয় কয়েকজন নেতা রাস্তার বরাদ্দ কেটে নিয়ে অন্য স্থানে রাস্তা নির্মাণ করেছে।
অথচ, এই রাস্তাটি দিয়ে এলাকার ৪/৫ টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। তাদের ফসল তোলা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল কাজ করে থাকেন। স্কুল ছাত্রী আসমানি খাতুন ও ইরানী জানান, “রাস্তায় কাদার কারণে আমাদের স্কুলে যাওয়া হয় না, কাঁদা মাড়িয়ে যেতে পারি না। আমাদের পোশাক ও বই খাতা ভিজে যায়।রাস্তাটি পাকা করে আমাদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
আহমেদ আলী ও রবগুল হোসেন নামের দুই ব্যক্তি জানান “বয়স ৯০ বছর হয়ে গেছে, ৮ জন এমপি পার করেছি। কেউ আমাদের দেখেনি। এই রাস্তাটি নিয়ে বেচাকেনা হয়েছে শুধু। আমরা বার বার তাদের কাছে আবেদন করেছি। আমাদের আবেদন তাঁদের কাছে তুচ্ছই থেকেছে। এবার ভোট চাইতে আসলে তাদের সেই জবাব দেওয়া হবে।”
রমেলা খাতুন ও জাহানারা ভানু নামের দুজন নারী জানান, “রাস্তার কারণে রোগী হলে নিয়ে যেতে পারিনি। ভ্যান গাড়িও আসেনা। মাঠের আবাদ পানি তুলতে পারিনি। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো যায়না। আমরা বৃদ্ধদের নিয়ে বড় সমস্যায় আছি। এই গ্রামের মেয়েদের শুধু রাস্তার কারণে বিয়ে পর্যন্ত হতে চাইনা।”
গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের ঝোরপাড়া গ্রামে কেবলমমাত্র একটি রাস্তা না থাকায় প্রায় সহস্রাধিক মানুষ বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। কবে মিলবে আশ্বাসের বাইরে বাস্তব উন্নয়ন সেই প্রশ্নই এখন স্থানীয়দের।”