মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত 'মেহেরপুর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট' নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কাগজে-কলমে পরিচালিত হলেও বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো শিক্ষার্থী, নেই কোনো শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম।
অথচ শিক্ষা অফিসের তালিকায় প্রতি বছরই এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ থেকে ১৫ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চলতি বছরও জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে বলে উল্লেখ রয়েছে। মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা কমিটির সদস্য মো. জাহিদুল আলম জানান, কেউই প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেনি, এমনকি কেউ পরীক্ষায়ও অংশ নেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৫ সাল থেকেই নিয়মিতভাবে ভুয়া পরীক্ষার্থী দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রায়হান মুজিবের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন কলেজেই অবস্থান করছেন। আমরাও কলেজে জানালে তিনি দুখ প্রকাশ করেন। পরে তিনি স্বীকার করেন বর্তমানে কেবলমাত্র কাগজে-কলমে ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং এবছর ১০ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৪ সালে রাজনৈতিক প্রভাবেই প্রতিষ্ঠা পায় এই কলেজ। তবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানমুখো হওয়া বন্ধ করে দেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভবনটি স্থানীয়দের কাছে কার্যত গুদামঘরে পরিণত হয়েছে। মাঠে কাজ করতে যাওয়া শ্রমজীবী বজলুর রহমান প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে পতাকা এনে কলেজে উত্তোলন করেন এবং কাজ শেষে আবার পতাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এজন্য তাকে মাস শেষে কিছু হাতখরচ দেয়া হয়। বজলুর রহমানও বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রতিষ্ঠানটির বারান্দা ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিপণ্যের অস্থায়ী সংরক্ষণাগার হিসেবে। অথচ কাগজে-কলমে এখনো সেখানে কর্মরত রয়েছে ৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হযরত আলী বলেন, “বোর্ড কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন এখনো বাতিল হয়নি। ফলে এটি অফিসিয়ালি বন্ধ হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়। তবে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কার্যক্রম নেই, বিষয়টি আমরা অবগত।” তবে তিনি স্বীকার করেন এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠানের ১০ জন অংশ নেয়ার তালিকা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।