কালামের বিরুদ্ধে এবার আদালতে মামলা

মেহেরপুরের জেলা দায়রা ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এবার অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, সনদ জালিয়াতি, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎসহ প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদকের কুষ্টিয়ার উপপরিচালককে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। যার মামলা নম্বর:পিটিশন-০১/২০২১।

মামলার বাকি আসামিরা হলেন সহকারি শিক্ষক শরিফুল ইসলাম (কম্পিউটার), সাদ্দাম হোসেন, শরিফুল ইসলাম (ধর্ম), শাহ আলম, জাহানারা খাতুন, জাফিরুল ইসলাম, আনিছুর রহমান ও নার্গিস খাতুন। মামলার এজাহারে বাদির অভিযোগ, মেহেরপুর সদর উপজেলাধীন বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনি নিজেই স্কুল প্রতিষ্ঠানে ৪০ শতক জমি দান করেছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রতারনা করে তাদের দু’জনকেই এম.পি.ও থেকে বাদ দিয়েছেন। স্কুলটি গত ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে এম.পি.ও ভূক্ত হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ অন্যান্য আসামীদের সাথে পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত থেকে বেতন গ্রহণ করা স্বত্ত্বেও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেখিয়ে এম.পি.ও’র সরকারী অর্থ উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বাদির অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ একটি হত্যা মামলারও আসামি। যার মামলা নং জি. আর-৫৩/০৬। এছাড়া সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, রাজনগর দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের মে মাস পযন্ত, সহকারী শিক্ষক মোঃ সাদ্দাম হোসেন, সদর উপজেলায় সরকারের একটি বাড়ি এটি খামার প্রকল্পে প্রকল্পে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত, শরিফুল ইসলাম (ধর্ম), দরবেশপুর দাখিল মাদ্রাসায় ২০১৫ সাল পর্যন্ত চাকুরী করে সেখানকার বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তাদেরকে ভূয়া ভাবে কাগজপত্র দাখিল করে নিয়মিত শিক্ষক দেখিয়ে এমপিও ভূক্ত করে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি নার্গিস খাতুন, দিলারা পারবভীন, শাহ আলম, জাহানারা খাতুন, আব্দুস সবুর, ফিরোজা খাতুন, আবুল কালাম আজাদ তাঁরা কেউ বিএড ক্লাশে পড়াশোনা করেননি বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি। কিন্তু তাদের বি.এড পাশের সনদ পত্র সৃষ্টি করে দাখিল করেন এবং সনদপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চতর স্কেল নিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করে করছেন। প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ ওই সনদ গুলো মােটা অংকের টাকার বিনিময়ে তৈরি করে তা অফিসে দাখিল করে টাকার বিনিময়ে সুপারিশ করে উচ্চতর স্কেল পাস করিয়ে দিয়েছেন। এ কাজে তাকে প্রত্যক্ষ হায়তা করেছেন সাবেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী। তিনি জেনে শুনে নিজেকে এবং অপরকে অন্যায় ভাবে লাভবান করার অসৎ মানসিকতায় প্রতিটি জাল সনদপত্রে সুপারিশ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ফরওয়ার্ডিং করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ, এক নম্বর আসামি আবুল কালাম আজাদ, প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগে ছাত্র/ছাত্রী না হওয়া স্বত্ত্বেও ভূয়া ছাত্র/ছাত্রীর নাম দেখিয়ে ২০ থেকে ২৫ জনের নামে দীর্ঘদিন যাবৎ উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন। যার মধ্যে আফরােজ বাপ্পী, রোকেয়া খাতুন, লামিয়া খাতুন, রাজু আহমেদ, তানিয়া খাতুন, রাজিব আলী। তাদের নামের পাশে শিক্ষকদের বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও আবুল কালাম আযাদ ২০২০-২১ অর্থবছরে ছাত্র/ছাত্রীদের টিউশন ফি’র সরকাররি আড়াই লাখ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তিনি তাঁর নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন স্থানে জমি কিনে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। যার একটি তালিকাও এজাহারে উল্লেখ করেছেন।