কালীগঞ্জে দখলে দখলে চিত্রা নদী আজ সরু খাল

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের চিত্রা নদীর জায়গা দখল চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নতুন নতুন দখলবাজদের আবির্ভাব ঘটে। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্ষমতার পালাবদলে দখলবাজদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর জমিতে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আবার জায়গা আয়ত্তে রাখতে কাটা হয়েছে ছোট বড় পুকুর। কেউ কেউ নদী দখল করে পরিণত করেছে ফসলি মাঠে। এখন দখল বাদে নদীর মাঝখানে যতটুকু জায়গা আছে দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন সরু খাল। আবার এখানেই চলছে দূষণ সৃষ্টির পাল্লা। সর্বোপরি খননের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ নদীটি।

চিত্রার পাড়ের বাসিন্দা আজিজুল জানান, এক সময়ের প্রমত্তা চিত্রা নদীটি আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সংযোগকারী এ নদীর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অংশের নিমতলা ও মধুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার দু’পাশে দেদারছে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে বর্জ্য। ফলে যতটুকু পানি আছে তা দূষিত হয়ে যাচ্ছে। দু’পাড় থেকে জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, বড় বড় ভবন। দখলের কবলে ৩৯ মিটার প্রস্থের নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন যতটকু জায়গা আছে তা মাত্র কয়েক মিটার প্রশস্ত হবে। দিনের পর দিন এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ নদী দখল করলেও যেন দেখার কেউ নেই। এখন মাটি ভরাট হয়ে বর্ষাকালে কিছুটা পানি থাকলেও শুকনা মৌসুমে পানি চোখে পড়ে না বললেই চলে। চিত্রা হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এ অবস্থা চললেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছু বলতেও পারে না সাধারণ মানুষ।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, নদীর দুই তীর দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ঘর, বিভিন্ন দলের অফিস সহ নানা প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবক সদর উদ্দীন বলেন, মাটি এবং বর্জ্য দিয়েও নদী ভরাট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আজ নদীর সাথে সংযুক্ত খালেও নেই পানি। এর ফলে প্রভাব পড়েছে কৃষি জমির সেচ কাজেও।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, নদীগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ দখলবাজদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের দ্রুতই উচ্ছেদ করা হবে। এর আগে নদীগুলোতে যারা বাধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করেছিল তাদের বিরদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নদীগুলোতে দূষণ চলছে এমন অভিযোগ পেয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। উপরি নির্দেশনা মোতাবেক চিত্রা দখলমুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।