কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গৃহবধূরা

শীত এলেই কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন মেহেরপুরের গৃহিণীরা। বিভিন্ন জায়গায় এর নাম ভিন্ন হলেও এ এলাকায় কুমড়া বড়ি নামে সবাই চেনে। পৌষের শুরু থেকেই সব বাড়িতে চলে এর উৎসব।

মেহেরপুর জেলার জন্য এ বড়ির প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। কুমড়া আর কলাই এক সঙ্গে পিষে তৈরি করা হয় এক প্রকারের মণ্ড। যা কোনো পাত্রে ছোট করে সারিবদ্ধভাবে ২-৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় সুস্বাদু বড়ি। এরপর ঘরে সংরক্ষণ করে তরকারিতে দিয়ে সারা বছর খাওয়া হয়।

গৃহিণীরা জানান, বর্ষা মৌসুমে গ্রামের প্রায় প্রত্যেক কৃষক পরিবারেই চালকুমড়া লাগানো হয়। এ কুমড়ার জালি তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। আর কিছু কুমড়া বড়ি দিতে রাখা হয়।

সাজু বিবি নামে এক বৃদ্ধা বলেন, এক সময় বড়ি দেয়াটা বেশ কঠিন কাজ ছিল। তখন প্রচণ্ড শীতে রাত জেগে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে মণ্ড তৈরি করা হতো। কিন্তু এখন মেশিনে করা হয়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা বন্দর গ্রামের পুষ্প আরা জানান, বড়ি বানাতে কলাই প্রথমে পানিতে ভেজানো হয়। পরে এর কালো ছাল তুলে কুমড়ার সঙ্গে মিশিয়ে মেশিনে বা ঢেঁকিতে পিষে মণ্ড করা হয়। একপর্যায়ে আঠালো হলে জাল, টিন, চালুনি কিংবা পরিষ্কার কাপড়ে ছোট, ছোট মন্ডু আকারে দিয়ে রোদে শুকাতে হয়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা বামন পাড়া গ্রামের হালিমোন নেছা জানান, এ বছর তিনি কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরে কলাই ও ৩০০ টাকা দিয়ে তিনটি কুমড়া কিনে বড়ি দিয়েছেন এবং সেখান থেকে অর্ধেক পরিবারের জন্য রেখে বাকিটা শহরে থাকা মেয়ে জামাইদের জন্য পাঠিয়েছেন।

মেহেরপুর সরকারী কলেজের রাষ্ট বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আল আমীন (ধুমকেতু) জানান,যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ বাড়িতে কুমড়া বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। সময়ের আবর্তে বড়ি- এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারপরও অনেক মানুষ বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং এই কুমড়া বড়ি তৈরি করে অনেকেরই সংসার চলে।

এই বিষয়ে মেহেরপুর বড় বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুস সুবান,আব্দুস সহিদ মেহেপুর প্রতিদিন কে জানান, কুমড়া বড়ি মেহেরপুরে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কৃষক পরিবার গুলোতে নিজে থেকে তৈরি করে যে কারণে একটু বেচাকেনা কম, তার পরেও প্রতিনিয়তই তিন থেকে চার কেজি করে কুমড়ার বড়ি বিক্রয় করছি এবং এর বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি কুমড়ার বড়ি ৩০০ -৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।