
অবশেষে ভারতের উড়িষ্যার ১৪ নাগরীককে কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিএসএফের কাছে তুলে দিলেন বিজিবি। গতকাল দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া মিরপুর ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর মাধ্যমে তাদেরকে ভারতে প্রেরণ করে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি জানান, সীমান্ত আইন ও আন্তর্জাতিক রীতি লঙ্ঘন করে বিএসএফ দ্বারা ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে (দর্শনা সীমান্ত দিয়ে) ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় বিজিবি কঠোর প্রতিবাদ জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসএফের ১৪৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট শ্রী প্রেমপাল সিংয়ের উপস্থিতিতে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের ভারতের অভ্যন্তরে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি আরো জানান, বিজিবির মোহাম্মদপুর কোম্পানি কমান্ডার ও বিএসএফের জলংগী কোম্পানি কমান্ডারের মাধ্যমে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৪ জনকে পুশব্যাক করা হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ভারতের নদীয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিএসএফ দর্শনা সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে। পুশইন ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ, ছয়জন নারী ও দু’জন শিশু ছিল বলে বিজিবি ও পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পুশইনের পর দর্শনা হল্ট স্টেশনের কাছে একটি গাছতলায় তারা প্রচণ্ড শীত ও খাবারের অভাবে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকলে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে খবর পেয়ে দর্শনা থানা পুলিশ ও দর্শনা বিজিবির একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে এবং পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করে।
পুলিশ ও বিজিবি জানায়, তারা ভারতের ওড়িষ্যা প্রদেশের জগশ্বরপুর জেলার বাসিন্দা। উদ্ধার ব্যক্তিরা হলেন- গুলসান বিবি (৯০), জব্বার আলি (৭০), আলকুম বিবি (৬৫), উকিল শেখ (৪৩), সাবেরা বিবি (৩৪), হাকিম আলি (৪৫), সামসেরা বিবি (৪২), শেখরাজ (৩২), মেহেরুন বিবি (২৫), রহিদ আলি (৩৪), শেখ বান্টি (২৮), শাকিলা খাতুন (১০), নাছরিন নেছা (১২) ও মো: তৌহিদ আলি (১৪)।
উড়িষ্যার বাসিন্দা বৃদ্ধ জব্বার আলি সাংবাদিকদের জানান, আমরা ভারতের নাগরিক। আমাদের কাছে নাগরিক কার্ড ও আধার কার্ড ছিল, সব কেড়ে নেয়া হয়েছে। শুধু মুসলিম পরিচয়ের কারণে আমাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ দেশে আমাদের কেউ নেই, আমরা কোথায় যাবো?
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি হাসান জানান, রাতেই ১৪ জনের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল) মো: আনোয়ারুল কবির রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দর্শনা বিজিবি সূত্র জানায়, উদ্ধার ১৪ জনকে শনিবার রাতেই কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা সবাই হিন্দি ভাষাভাষী এবং বাংলাদেশে তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কেউ নেই বলে জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পুশইন ইস্যুতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।


