কুষ্টিয়ায় গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

বর্তমান মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুষ্টিয়ায় গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

ভালো ফলন হলে ব্যাপক লাভের আশা করছেন এই এলাকার কৃষকেরা।

জানা যায়, আগে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গমের চাষ করা হতো। গমের ক্ষতিকারক রোগের কারণে গমের চাষ বাদ দেন এই অঞ্চলের চাষিরা। পরবর্তীতে আবার ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা গম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। তবে এই মৌসুমে গম চাষে ব্যাপক ফলন হয়েছে। যার ফলে কৃষকদের মাঝে হাসি ফুটেছে।

আগের মৌসুমগুলোতে গম রোগে আক্রান্ত হলে দিশেহারা হয়ে পড়েন চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গম চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন কৃষকরা। তবে এসব ফসলে খুব একটা লাভ কিংবা আশার আলো দেখাতে পারে চাষিরা। পরবর্তীতে আবার ধানের দাম কম পাওয়ায় চাষ শুরু করেন গমের। আর এতেই সাফল্যের দেখা পান তারা।

তবে এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারো গম চাষ করছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গমও ভালো হয়েছে। তবে এবছর জেলায় কোথাও ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়নি। তবে কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে মরিচা রোগ। কৃষি অফিসের তৎপরতায় তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে রোগটি কৃষি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভেড়ামারা উপজেলার কৈগাড়ীপাড়া এলাকার কৃষকঃ মোঃ মতিউর রহমান এবার এক বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, তীব্র শীতে অনেকসময় গমের ক্ষেত নষ্ট হয়। তবে এবার তেমন কোন ক্ষতি না হওয়ায় ভালো ফলন পাবো বলে আশা করছি।

ভেড়ামারা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আব্দুল মুন্নাফ বলেন, রাজস্ব খাতের অর্থায়নে গম প্রদর্শনী বারিগম: ৩৩ আবাদ করে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানান রকম উদ্বুদ্ধকরণসহ পরামর্শ প্রদান করে থাকি।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষি অফিস জানায়, বিগত মৌসুমগুলোতে গমের চাষ হতো ব্যাপকহারে। তবে রোগের আক্রমণ হওয়াতে কৃষকরা অন্য ফসল চাষ শুরু করেন। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১হাজার ৩শ ৪৫ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মিরপুর উপজেলার মশান গ্রামের গম চাষি আব্দুল মান্নান জানান, আগের কয়েক মৌসুমগুলোতে গমের রোগ (ব্লাষ্ট) হওয়ার কারণে লোকসান হওয়ায় নিরাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে আবার কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে গম চাষ শুরু করি। সবকিছু ঠিক থাকলে এই মৌসুমে গমের চাষ ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছি।

আরেক চাষি ফারুক আধী বলেন, গত ২ বছর আগে গমের চাষে লোকসানে পড়েছিলাম। তাই এর পরের বছর গমের চাষ বাদ দিয়েছিলাম। কৃষি অফিসের পরামর্শে আবার এই বছর গমের চাষ শুরু করি। এই বছর রোগের আক্রমণ না হওয়াতে ফসল বেশ ভাল হয়েছে। আশা করছি এই বছর গম চাষের লাভ বেশি পাব।

মিরপুরের কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে গমের চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে এই মৌসুমে কৃষকদের গম চাষের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। কৃষকরা গমের চাষ শুরু করলে ফলন ভালো হওয়াতে সাফল্য পেতে শুরু করেন।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, চলতি মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অনেগুন বেড়েছে।

জেলার ৬টি উপজেলায় ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে।

গম চাষের ব্যাপারে কৃষকদের বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করা যায় এই বছর গমের চাষে কৃষকেরা বেশ লাভবান হবেন।