কুষ্টিয়ায় মুখরিত পিঠা উৎসব: উচ্ছ্বাসে আগত দর্শনার্থীরা

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব।

খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়।

তেমনি কুষ্টিয়া পৌরসভার বটতলায় তিনব্যাপী পিঠা উৎসবের আয়োজন করে কুষ্টিয়া নারী উদ্যোক্তা।

শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন।

এসময় তিনি বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য প্রবাহেরই একটি অংশ হচ্ছে পিঠা। এ দেশের লোকসংস্কৃতিরও অংশ সবার প্রিয় এই খাদ্যটি। আর পিঠাশিল্পীদের বানানো প্রতিটি পিঠায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, মিশে থাকে আবেগ- এটি পৃথিবীতে বিরল।

তিনি বলেন, পিঠা উৎসবের মুলেই রয়েছে ঢেঁকি। অথচ এখনকার মানুষ এই ঢেঁকি সম্পর্কে জানেই না। ঢেঁকি যেন জাদুঘরে রাখা লাগবে আগামীতে। তাই কুষ্টিয়ার নারী উদ্যোক্তারা যেভাবে আজকের এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানাই। তবে বরিশালের মেয়েরা পিঠা তৈরীতে আরও বেশি পারদর্শী। প্রয়োজনে বরিশাল গিয়ে আমাদের মা-বোনদের পিঠা তৈরী করা শিখে আসতে পারে বলেও যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ঢাকায় পিঠাঘর রয়েছে। যেখানে হরেক রকমের পিঠা তৈরী করা হয়েে থাকে। তাই কুষ্টিয়াতে এরকম একটা পিঠা ঘর তৈরী করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে আজকের এই নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি নারী উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী মৌবনের নির্বাহী পরিচালক সাফিনা আনজুম জনি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা নারী।আমরাও পারি।হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। আমরা খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। এদেশের নারী সমাজ লোকজ শিল্পকর্মে অত্যন্ত নিপুণ এবং সুদক্ষ।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা চিরকালই অতিথি পরায়ণ। সামাজিক বন্ধনটিও শক্ত আমাদের।এই শহরে আমরা নারী উদ্যোক্তারা মিলে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি এতে করে শহরের মানুষরা এখানে ছুটে আসবে। আনন্দ চিত্বে পিঠা উ’সবে অংশগ্রহণ করবে। পিঠা খাওয়ার পাশাাপশি আনন্দ করবে-সে আনন্দের ভাগ সবাই পাবে। এ জন্যই শীতে আমাদের এই আয়োজন।

অনষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক কোহিনুর খানম, নারীনেত্রী ও হাটশহরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শম্পা মাহমুদ, আফরোজা আক্তার ডিউসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাণের টানে ছুটে আসা সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে উৎসবস্থল। শীতের পিঠা-পুলিসহ নানা বৈচিত্র্যময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে পিঠা উৎসবে অংশ নেয় স্টলগুলো। সেই পসরায় মুগ্ধ হয়ে স্টলে স্টলে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন সকল বয়সের মানুষ।

তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পিঠা উৎসব চলবে। পাশাপাশি উৎসবস্থলের বটমুলে উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সময়ের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা।আগামী রবিবার শেষ হবে এ অনুষ্ঠান।