কেরুজ চিনিকলে ২০২১-২২ মরসুমে আখ মাড়াই উপলক্ষে স্লো-ফায়ারিং করা হয়েছে।  শুক্রবার দুপুরে মিল হাউজের বয়লার বিভাগে স্লো-ফায়ারিং উপলক্ষে এক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও আলোচনা শেষে বয়লারে ২০২১-২২ মাড়াই মরসুমের অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে স্লো-ফায়ারিং করা হয়েছে।

 দোয়া অনুষ্ঠানে  আলোচনা করেন কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মহা-ব্যবস্থাপক (অর্থ) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ মোঃ সাহাব উদ্দিন, ব্যবস্থাপক বীজ পরিদর্শন ও কৃষিতত্ব বিভাগ-দেলোয়ার হোসেন, মহা-ব্যবস্থাপক (কৃষি) গিয়াস উদ্দিন, মহা-ব্যবস্থাপক (ফার্ম) সুমন কুমার বিশ্বাস, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সম্পাদক খবির উদ্দিন সহ কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ শ্রমিক-কর্মচারীরা।

অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন, কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মাও. শামসুজ্জোহা। দোয়া শেষে বয়লারে অগ্নিসংযোগের উদ্বোধন করেন, মসজিদের মুয়াজ্জিম নেছার উদ্দিন।

১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জজেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত এশিয়া মমহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও দেশের একমাত্র ভারী চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোং (বাং) লিঃ। এ চিনিকল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলিটির যেন সারা গায়ে ঘায়ে পরিণত। ফি বছর এ মিল থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছিলো উদাসীন। কেরুজ চিনিকলটি আধুনিকায়ন করণে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাংঙ্খিত দাবি বারবার হয়েছে উপেক্ষিত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর মহতী উদ্যোগে মিলটিকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় থেকে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীতে আধুনিকায়ন কাজের জন্য ডিষ্টিলারী সহ বিভিন্ন উন্নয়নে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তারই অপ্রাণ প্রচেষ্টায় মিলটি আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কচ্ছপ গতিতে কাজ চলায় দীর্ঘ ৯ বছর অতিবাহিত হলেও পূরোপুরি আধুনিকায়নে রুপ নিতে পারেনি।

এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি প্রতি বছরেই পুরোনো যন্ত্রাংশ জোড়াতালি ও ঝালাই-মেরামত করে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করতে হয়। যার ফলে শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যার মোকাবেলার মধ্যদিয়ে টেনেহেঁচড়ে মাড়াই মরসুম শেষ করতে হয়। ফলে লোকসান গুনতে হয় কোটি কোটি টাকা।

বর্তমানে আধুনিকায়নে বয়লিং, কেইন কেরিয়ার ও মিলহাউজের কাজ চলছে। এরমধ্যে কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ কাজ অসম্পন্ন থাকায় আরও মিলটি সম্পন্ন আধুনিকায়নে আরও কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে।
এ মরসুমে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জনের জন্য মিল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নানামুখি পদক্ষেপ। আখচাষিদের সুবিধা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, শ্রমিক-কর্মচারীদের দিকেই খেয়াল রাখা হচ্ছে।

তবে বর্তমানে সদ্য যোগদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন তিনি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগদানের পর থেকে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দর্শনা কেরুজ চিনিশিল্পকে লাভজনকে পরিণত করতে যোগদানের পর থেকে আখ চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কেরুজ মিল জোন এলাকায় ছুটছেন চাষিদের দ্বারে,দ্বারে। তেমনি প্রতিদিন কোন না কোন এলাকার চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠক সহ সোজন্য মূলক আলোচনায় বসছেন। তিনার এমন উদ্দ্যগে এলাকার চাষিরা আখ চাষ করার কথা ব্যাক্ত করেছেন। সেই সাথে ২০২১-২২ মাড়াই মরসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে কোন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়তে না হয় সেদিক লখ্য রাখছেন।
সেই সাথে মাড়াই মরসুম সফল করতে ওয়াটারট্রাই সম্পন্ন সহ মিল হাউজ ও কেইন কেরিয়ার ট্রাইল দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ছোটখাটো ত্রুটির সন্ধান মিললে তা সারিয়ে নেয়া হবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো। চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৫৫০ একর জমিতে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন করেছিল। এবং কৃষকের ৬ হাজার ৯৮২ একর জমির ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আখ লাগিয়েছিলো। কিন্তু এবার মাত্র ৪৫ দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে কেরু চিনিকল ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো। চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৫৫০ একর জমিতে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন করেছিল। এবং কৃষকের ৬ হাজার ৯৮২ একর জমির ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আখ লাগিয়েছিলো। কিন্তু এবার মাত্র ৪৫ দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে।

কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২১-২২ মাড়াই মরসুম বড় ধরনের কোন যান্ত্রিক সমস্যার সম্মূখীন হতে না হয় সেজন্য সকল যন্ত্রাংশ ট্রাইল দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি কোন সমস্য আছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে মিলটি মাড়াই মরসুম সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে।

আশা রাখি সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে মাড়াই মরসুম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সেই সাথে সকলের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে।

তবে চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাচামাল হচ্ছে আখ। তিনি এতদ্বা অঞ্চলের চাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেছেন, দেশের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকলকে রক্ষা করতে বেশি বেশি করে আখ চাষের কোনো বিকল্প নেই।