পাকা আম থেকে মিষ্টি সবেদা— দেখে জিভে পানি এসে গেলে খেতে পারেন না ডায়াবেটিস রোগীরা। এ ফলগুলো যে একেবারে খাওয়া যায় না, তা নয়। কিন্তু খেতে গেলে ক্যালরির হিসাব কষা দরকার। কারণ সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীকে এমন খাবার খেতে বলা হয়, যেসবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে।
অর্থাৎ যে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না। কিন্তু আম থেকে আঙুর, আনারসের মতো ফলের পুষ্টিগুণ থাকলেও সেগুলোতে শর্করার মাত্রাও যথেষ্ট থাকে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও নেহাত কম নয়। এসব ফল নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়, বিশেষত ভরপেট খাওয়ার পর। সুমিষ্ট রসালো ফল বাদ গেলে ডায়াবেটিস রোগীরা আর কোন ফল খাবেন?
এ বিষয়ে ভারতের পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলেছেন, ডায়াবেটিস রোগীরাও আম খেতে পারেন। স্ন্যাক হিসেবে আম আমরা খেতে বলি। তবে তার মাত্রা থাকা দরকার।
আরেক পুষ্টিবিদ বলেন, যে কোনো রসালো ফল ডায়াবেটিস রোগীরা খেলেও তা খেতে হবে মেপে। সাধারণত কোনো খাবারের সঙ্গে ভাত-রুটি খাওয়ার পরেই রসালো ফল খেতে বারণ করা হয়। এতে ক্যালোরির মাত্রা বেড়ে যায়। তবে
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ— দুটি খাবার খাওয়ার মাঝের সময়টিতে তা খাওয়া যেতে পারে। কারণ ক্যালরির হিসাব এ ক্ষেত্রে জরুরি এবং খেতেও হয় পরিমিত।
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে— তাহলে রসালো ফলের বদলে ডায়াবেটিস রোগীরা আর কোন ফল খাবেন?
আমের বদলে বেরি
ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর আমে গ্লুকোজ় এবং ফ্রুক্টোজ় রয়েছে, যা আসলে শর্করা। একটি মাঝারি আকারের আমে ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা মেলে। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫১-৬০ অর্থাৎ মধ্যম থেকে উচ্চমাত্রার। ফাইবার থাকলেও গোটা বড় আম ডায়াবেটিস রোগীরা খেয়ে ফেললে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। কয়েক টুকরো খাওয়ায় আপত্তি না থাকলেও একটি মাঝারি আম খেলে অন্য খাবার খাওয়া কমাতে হবে। এর বদলে যে কোনো বেরি জাতীয় ফল নির্দ্বিধায় পাতে রাখা যায়। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আমলকী— এমন ধরনের ফল খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা। এই ফলগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অথচ পুষ্টিগুণ যথেষ্ট।
পাকা কলার বদলে পেয়ারা
পাকা কলাতেও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যদি নিয়ম জেনে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। তবে কলার বদলে পেয়ারা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো। ফাইবার সম্পন্ন ফলটি ভিটামিন সি এবং নানা রকম খনিজে পূর্ণ। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় মাত্র ৫ গ্রাম শর্করা মেলে। তা ছাড়া এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও বেশ কম।
আঙুরের বদলে বেদানা
রসালো ফল আঙুরও ইচ্ছামতো খেতে পারেন না ডায়াবেটিস রোগীরা। ১০০ গ্রাম আঙুরে ১৬-২০ গ্রাম পর্যন্ত শর্করা মেলে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬০-এর কাছাকাছি। বদলে বেদানা খাওয়া যেতে পারে। এতে শর্করার মাত্রা কম, গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। এতে মেলে পলিফে্নল্স-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহের কারণেও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
আনারসের বদলে পেঁপে
আনারসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৬-৯৪। ফলে আনারস কয়েক টুকরো খেলেই রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত হারে বাড়তে পারে। এর বদলে খাওয়া যেতে পারে পাকা পেঁপে। ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবারপূর্ণ ফলটি খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা।
সবেদার বদলে আপেল
রসালো মিষ্টি সবেদা খেতে ভালো হলেও একটি ফলেই শর্করার মাত্রা থাকে অনেক। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৫-৭০। বিশেষত রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকলে, এই ফল এড়িয়ে চলা দরকার। ভাত-রুটি খাওয়ার পর তা খাওয়া অনুচিত। এর বদলে নির্দ্বিধায় খেতে পারেন আপেল। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যেমন কম, তেমনই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে ফাইবার থাকা খুব জরুরি। কারণ সেটি ছাঁকনির কাজ করে। চট করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
সূত্র: যুগান্তর