খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ কি বাড়ছে?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো ও শর্ত শিথিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার এ আবেদন পৌঁছে দেন। সেই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে। আইনমন্ত্রী আবেদনে ইতিবাচক সুপারিশ করলে সেটি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপরই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়বে কি বাড়বে না সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ সাজা ছয় মাস স্থগিত করে মতামত দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পৌছায়।

এ প্রসঙ্গে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার নিজ দফতর সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার দণ্ডটা বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য তারা আবার সময়টা এক্সটেনশন করার জন্য, আরও কিছু শর্ত শিথিল করে এক্সটেনশন চেয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো, মওকুফ এবং শর্ত শিথিলের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন মুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হবে।
তারা কী চেয়েছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা তাদের পত্রে শর্ত আরও শিথিল করে, করোনাকালে চিকিৎসা নিতে পারেননি সেটি জানিয়েছেন। এছাড়া তার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা যায় কি না সে বিষয়েও আবেদনে বলেছেন।

পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা তো বলছি এটা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত এলে আমাদের যথাযোগ্যদের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবেদনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি চাওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা সবসময় তার চিঠিতে লেখা থাকে। রেফারেন্সে থাকে বিদেশে যাওয়ার, সেরকম লেখা থাকে কিন্তু উনি তো এখনও কারাগারেই আছেন। তার বাড়িটা এখন কারাগার হিসেবেই তিনি এখানে আছেন।
সাজা মওকুফের কোনো সুযোগ আইনগতভাবে আছে কি না তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আবেদন করেছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। আমি তো আগেই বলেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় যতখানি সম্ভব সেটুকু ব্যবস্থা উনি করছেন।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। উনাকে মুক্তি দেওয়া হলেও কার্যত এখনও কারাবন্দি। উনার বিশেষায়িত চিকিৎসা দরকার কিন্তু তা হচ্ছে না। এটা তার সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার। সেই অধিকার থেকে সরকার তাকে বঞ্চিত করছে। চিকিৎসা সেবা পেতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে গত বছরের ২৫ মার্চ মুক্তি পান। মুক্তিতে দুটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়- এ সময় খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের দণ্ড মওকুফের সময়ে পেরিয়ে যাওয়ার আগে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে সরকার। যা ২৪ মার্চ শেষ হবে। এর আগেই মঙ্গলবার পরিবারের পক্ষ থেকে দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে ফিরোজাতেই দিন কাটে খালেদা জিয়ার। তিনি বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে যাননি গত এক বছরে। তাকে বাড়ির ছাদ বা আঙিনায় কখনও দেখা যায়নি।
বাসার নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম, কিংবা ভাইয়ের স্ত্রী আসেন দেখা করতে। এ ছাড়া তাকে দেখতে আসেন মেডিকেল টিম। দলীয় কোনো নেতাকর্মীদের এই বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের কেউ কেউ মামলার প্রয়োজনে তার সঙ্গে দেখা করেন কালেভদ্রে। তাও অনুমতি নিয়ে, বহু আয়োজন করে এই সাক্ষাৎ করা লাগে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত এক বছরে অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক ও স্বজনরা।
গুলশানে ‘ফিরোজা’ নামের যে বাড়িটিতে তিনি এখন থাকেন, সেটি দোতলা একটি বাড়ি। মূল ফটক ও দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া। এই বাড়ির ভেতরে থাকেন খালেদা জিয়া। তাকে গত এক বছরে বাড়ির ছাদেও কেউ দেখেননি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে পত্রপত্রিকা ও বই পড়ে। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন। পরিমিত খাবার খান, সেটিও চিকিৎসকের পরামর্শে। এছাড়া টেলিভিশনে খবর দেখেন মাঝেমধ্যে। আত্মীয় স্বজনরা আসলে তাদের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। তবে তিনি খুব কম কথা বলেন।