গাংনীতে আশংকাজনকহারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স

মেহেরপুরের গাংনীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। গত ৯ মাসে পাঁচ শতাধীক উপরে রোগি গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগি আসছে চিকিৎসা নিতে। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর মাংস খেয়ে লোকজন এরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসি ও খামারীরা জানান, অসচেতনতা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রোগতত্ব বিভাগের একটি টীম। গতকাল বুধবার সকালে গাংনীতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ধর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: আব্দুর সবুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গবাদিপশু পালনকারী ও আক্রান্ত ব্যাক্তিদের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জাহাঙ্গীর আলম।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভিটাপাড়ার আমিরুল ইসলাম। ১ মাস আগে তার বাড়ির একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি এটি জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। তার দুদিন পরই দুই হাতে ও মুখে ফোড়া ও পচন দেখা দেয়। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ডাক্তার জানান, তিনি অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত। গরু জবাইয়ে সহযোগি তার ভাই ইদ্রীস এবং ফজলু এ রোগে আক্রান্ত হন। অপরদিকে মাংস রান্না করার সময় গরুর রক্ত ও বর্জ হাতে লাগায় স্ত্রী সালেয়ারা ও মেয়ে নারগিছ ও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন।

শুধু আমিরুলের পরিবার নয়, গোটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৯ মাসে পাঁশ শতাধীকের বেশী মানুষ অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিভিন্ন হাটবাজারে প্রশাসনিক নজরদারী না থাকায় স্থানীয় কসাইরা রুগ্ন গবাদি পশু জবাই করে মাংশ বিক্রি করে।

ওই মাংস খেয়েই লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কোন মোটাতাজা গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কাউকে না জানিয়ে ওই গরুর মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। এ গরু কোন রোগে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। তা ছাড়া প্রাণীসম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন লোক জনের তদারকী না থাকায় অসুস্থ গরু জবাই করা হয়।

ফলে দিনদিন এ রোগের প্রাদূর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা প্রণী সম্পদ বিভাগ থেকে প্রতি বছর অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা থাকলেও গবাদী পশু পালনকারীরা তা পান না বলে অভিযোগ করেন। বেশীর ভাগ খামারী ও পশু পালনকারী নিজ উদ্যোগে বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনে দিয়ে থাকেন। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বা মাঠ কর্মীরা কোন খোঁজ খবর রাখেন না। অনেক সময় অফিসে এসেও কোন সহযোগীতা না পাওয়ার কথা জানান কয়েক জন খামারী।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা জানান, হাটবাজার থেকে গবাদি পশুর মাংস এনে রান্না করা ও খেয়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। মাংস খাবার পরপরই মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গ চুলকানি দেখা দেয়। তার পর ফুলে ও পানি ঝরে। পরে জানতে পারি এটি অ্যানথ্রাক্স রোগ।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, অ্যানথ্রাক্স কি এবং কেন হয় তা জানেন না তারা। তাছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন অসুস্থ পশু নিয়ে গেলে কোন চিকিৎসা দেন না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতার কারনে আজ আমাদের পশুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা দিচ্ছে।

 

গাংনী বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে এ তহ বাজার তাই কোন রুগ্ন পশু এখানে জবাই করা হয় না। কিন্তু অন্যান্য হাট বাজারে কোন তদারকি নেই। ফলে রোগা ও অসুখে গরু জবাই করা সহজ। স্থানীয় লোকজনও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সস্তায় কিনে খায়। ফলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। বামন্দি বাজারের কয়েকজন কসাই জানান, গত ১০ বছরের একদিনও কোন লোকজন আসেনি পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করতে। কোন নজরদারী নেই।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিডি দাস জানান, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটা ছেড়া ও খাওয়ার কারণে সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাজারে রোগাক্রান্ত গরু যাতে জবাই না করতে পারে সেদিকে নজরদারী প্রয়োজন। আমাদের এখানে যে সব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে আমরা তাদের চিকিৎসা সেবা সহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবারহ করছি।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান জানান, বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগের বিস্তার বেড়েছে। তাছাড়া লোকবলের অভাবে তেমন কোন তদারকি করা সম্ভব হয়না। অনেকেই গ্রামে পশু জবাই করেন। অসুস্থ গবাদি পশুর মালিকরাও

নিজেরাই জবাই করে মাংস বিক্রি করে থাকে। এখান থেকেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
ঢাকা রোগতত্ব বিভাগ সিডিআইএল এর ইউএলও ডা. গোলাম আজম জানান,

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রোগিদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছেন এবং ফ্রিজে রাখা মাংস পরিক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স জীবানু পেয়েছেন। মাংসগুলো পুতে রাখেন এবং অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই করে গভীর গর্তে পুতে রাখার পরামর্শ দেন এ পরিদর্শক দল।

নিজস্ব প্রতিবেদক