গাংনীতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটেই সভাপতি ও সম্পাদক চান তৃণমূল আওয়ামী লীগ

তিন বছর মেয়াদী কমিটি গঠণ করে সেই কমিটির বয়স এখন ১৮ বছর। কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ১৫ বছর আগে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কাউন্সিলের তারিখ বার বার ঘোষণা করা হলেও তা আবার বন্ধও হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গাংনী উপজেলা শাখা কমিটি।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার ১২ জন নেতা মারাও গেছেন।এরা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বামন্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাছ আলী, কাথুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাবুল হোসেন, চৌগাছার সাবেক মেম্বর ইউনুস আলী, শেখ আবুল হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মহন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রুহুল আমিন জোয়ার্দ্দার, ওয়াহিদুজ্জামান জামান, মহাসিন আলী মহুরী, রুহুল আমিন।

এ পদ গুলো পুণরায় কোয়াপও করা হয়নি। পদগুলো শুণ্য থাকলেও কমিটির রাজনৈতিক কার্যক্রম চলেছে।

দীর্ঘ ১৮ বছর পর গাংনী থানা আওয়ামী লীগের এই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। ঘোষিত তরিখ অনুযায়ী চলতি মাসের ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল। গাংনী পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবার কথা আছে এই প্রতিক্ষীত ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল।

কাউন্সিলকে ঘীরে গাংনীর রাজনৈতিক অঙ্গণে শুরু হয়েছে নানা হিসেব নিকেশ। চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ। নেতা কর্মীদের মাঝে একে অপরের প্রতি যেমন ভালবাসার কথাগুলো মুখে মুখে বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঠিক তেমনী বিভিন্ন সময়ে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অনেকের সাথে অনেকের মাঝে বেড়েছে দুরত্ব। তৃণমুলের নেতা কর্মীদের সাথে উপজেলা পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে পুঞ্জভূত ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটের হিসেব নিকেশ সব মিলিয়ে গাংনীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন ছুটছেন তৃণমুলের নেতা কর্মীদের সাথে ভাব লাভ বাড়ানোর জন্য। তবে ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত হবেন নাকি কেন্দ্র থেকে তৃণমুলের নেতা কর্মীদের উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে পাঠানো প্রেসক্রিপশন দিয়ে নেতা চাপিয়ে দেবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গণ এখন বেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে।

তবে, দলীয় কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটের দাবী করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি গণতন্ত্রের মানষ কন্য শেখ হাসিনার কাছে। তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলর অনুষ্ঠিত হবে। অতএব প্রত্যক্ষ ভোট দিতে চাই আমরা। ভোটের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দলীয় নেতা নির্বাচিত করবো।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিলো ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক।

এই কাউন্সিলের আগে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মরহুম এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ খালেক।

পরে ২০১৫ সালে মেহেরপুর সামসুজ্জোহা পার্কে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে সভাপতি ও এমএ খালেককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করে আংশিক কমিটির নাম ঘোষণা করেন। পরে এম এ খালেক গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেন। সেই থেকে গোলামে মোস্তফা গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করে আসছেন।

দীর্ঘ প্রায় আঠার বছর পর ২০ মার্চ গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘীরে ইতোমধ্যে পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূরর্ণ স্থান।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কে কোন পদে স্থান পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

২০ মার্চ গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে হবে এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে চলছে নানা প্রস্তুতি। উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রতিটি প্রবেশপথ থেকে শুরু করে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত পোস্টার-ব্যানারে ঠাসা সড়কগুলো। ট্রাফিক আইল্যান্ড থেকে বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, কোথাও জায়গা খালি নেই আর। পুরো শহর এখন রঙিন বিলবোর্ডের দখলে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০০৪ সালের মার্চ মাসে সর্বশেষ গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরী, বাহাউদ্দীন নাছিম, খুলনা বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কল্পনা খাতুনসহ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।

নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক পদ কে পাবেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশি আলোচনা চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটিতে পদে প্রায় ২০ জনের নাম আলোচনায় রয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে সভাপতি পদের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী দলের বর্তমান সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। এ ছাড়া আরও আলোচনার রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম, সাবেক এমপি নুরুল হকের ছেলে ডা. নাজমুল হক সাগর, বর্তমান গাংনী পৌর সভার মেয়র আহম্মেদ আলী, সাবেক ছাত্র নেতা রিয়াজ আহমেদ, অ্যাডভোকেট শফিকুল আলমসহ বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বেশি আলোচনায় আছেন দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাষ্টার, নজরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা আনিসুজ্জামান লুইচ, বর্তমান মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমীন, ও গাংনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে গাংনী পৌর ইউনিট ও ৯ টি ইউনিয়ন ইউনিটের মোট কাউন্সিলর ৩১১ জন, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্য ও কোয়াপকৃত ২১ জনসহ মোট কাউন্সিলর ৩৯৯ জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলীয় নেতা কর্মীরা বলেন, সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা উপজেলা শহরে পোস্টার ব্যানার টাঙিয়েছেন। নেতাদের অনেকে আবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন পেতে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তারা এও জানান, বহদিন পর ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পদের জন্য ভেতরে-ভেতরে সবাই চেষ্টা চালালেও, বাইরে সবার হাসিমুখ দেখা যাচ্ছে।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, দলে দুই ধরনের নেতা রয়েছেন। কেউ তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন, কেউ ব্যবসায়ী ও আমলা। তবে আওয়ামী লীগে সব সময় তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাদের গুরুত্ব বেশি রয়েছে। সে মূল্যায়নে তিনি দলের ও উপজেলাবাসীর ভালোবাসা পেয়েছেন। এবারও পাবেন বলে আশা করছেন।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, আমি শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছি তাই নয়। আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে থেকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের, যুবলীগের দায়ীত্ব সফলভাবে পালন করেছি। এরপর তৃণমুলের নেতা কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।

দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের হয়ে কাজ করবেন। দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাঁরা সেটাই মেনে নেবেন। দলের প্রত্যেক নেতাই এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বেই বিগত সকল নির্বাচনে সফলতাও পেয়েছে। বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বিগত একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয় পাওয়ার পর দীর্ঘ ৩২ বছর পর আওয়ামী লীগের নৌকা জয়ের মুখ দেখেছে। সবশেষ ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে নুরুল হক আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে মেহেরপুর-২ (গাংনী)আসনটি ছিলে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে। মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত দিনে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এটা গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের এই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সফলতা হিসেবেই দেখছেন কমিটির নেতৃবৃন্দ।