গাংনীতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

মেহেরপুরের গাংনীর সাহারবাটি গ্রামে স্বামীর পরোকীয়ায় থাবা দেয়ার জের ধরে গৃহবধু আসমানি খাতুনকে শারীরীক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আসমানির মা রাকেদা খাতুন।
গতকাল বৃহষ্পতিবার ভোরে আসমানি খাতুনের মৃত্যু হয়। পরোকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় স্বামী সাজেদুল ইসলাম আসমানিকে নির্যাতন শেষে মুখে বিষ ঢেলে দেয় হয় বলে অভিযোগ করেন নিহত আসমানির বাবা।
আসমানির মা রাকেদা খাতুন জানান, স্বামী সাজেদুল এর পরোকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় আসমানিকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করতো স্বামী সাজেদুল। গত ৫ এপ্রিল রাতে সাজেদুল ইসলাম তার পরকীয়া প্রমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন। সে কথা শুনতে স্বামীর কানের সাথে কান লাগায় আসমানি। এতেই রাগান্মিত হয়ে লাঠি দিয়ে মারধর করে আসমানিকে।
পরে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলে সাজেদুল ও তার বাড়ির লোকজন মিলে ব্যাপক নির্যাতন শেষে আসমানির মুখে আগাছা নাশক বিষ ঢেলে দেয়। প্রতিবেশিরা টের পেয়ে আসমানিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করে।
চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ১৩ তারিখে আসমানির বাবার বাড়ি হাড়িয়াদাহ গ্রামে নিয়ে আসে। চিকিৎসার পর ১৪ তারিখ ভোরে আসমানির মৃত্যু হয়।
এবিষয়ে আসমানির পিতা আরশেদ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ করেন। যার নং ১৩।
আসমানির ছেলে তুহিন (১১) জানায়, বাবা এবং মায়ের সাথে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হতো এবং মাকে মারধর করতো বাবা। সেদিনও মাকে মারধর করে।
স্থানীয়রা জানায়, বিষয়টি ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য নিহত আসমানি ও তার স্বামীর পরিবারের মধ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিমাংসার প্রক্রিয়া চলছে।
তবে টাকার বিনিময়ে একটি হত্যা ও নির্যাতনের মত ঘটনাকে ধামা চাপা না পড়ে এবিষয়ে পুলিশকে গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটনের আহবান জানান এলাকাবাসী।
নিহত আসমানি খাতুনের চাচাতো ভাই আলেকচান সাংবাদিকদের জানান, দুপক্ষের মেম্বার মাতব্বরদের নিয়ে বসা হয়েছিল মিমাংসার জন্য আমার জানামতে টাকার বিনিময়ে মিমাংসা হয়েছে তবে কতটাকার বিনিময়ে মিমাংসা হয়েছে তা জানতে পারিনি। আমাদের ছোট মাথায় এতো কিছু জানার দরকার নেই। তবে মেয়না করা হয়েছে এটি মাত্র আই ওয়াশ ছাড়া কিছুই না। এর বেশী কিছু বলতে গেলে সমস্যা আছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, আসমানি ও সাজেদুল এদরে পরিবার ও গ্রামের মন্ডলদের সাথে একটি চুক্তি হয়েছে। যে চুক্তির বিষয়টি এখন প্রকাশ করা হচ্ছেনা। সময় হলে আস্তে আস্তে একসময় সব প্রকাশ পাবে। পুলিশ যদি এই মিমাংসার বিষয়ে জড়িত থাকে তবে সত্যতা উদঘাটন করার কেউ থাকবেনা বলেও মন্তব্য করেন তারা।
রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন আপোষ করা চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা অমিমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।
রাইপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল। আপোষ মিমাংসা হলে ময়না ছাড়ায় দাফন করার চেষ্টা চলছিল। পরে বিকেলে লাশ ময়না তদন্তের পর নিহত আসমানির পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধায় তাকে গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
অভিযোগ তদন্তকারি কর্মমর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। তাতে নিহত আসমানির পায়ের বিভিন্ন যায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়না তদন্ত শেষে সত্যতা প্রকাশ হবে।
গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আসমানির বাবা আরশেদ আলী বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্তের জন্র ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মেহেরপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।