গাংনীতে লোডশেডিং ও দাবদাহে বিপাকে কৃষক

গাংনীতে লোডশেডিং ও দাবদাহে বিপাকে কৃষক

গাংনীতে ফসল উৎপাদন নিয়ে বেশ বিপাকে কৃষকেরা। একদিকে মাঠভর্তি আউশ মৌসুমের ধান, পাট সহ বিভিন্ন ফসল প্রচণ্ড দাবদাহের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আরেকদিকে লোডশেডিংয়ে ফসল রক্ষা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। তীব্র লোডশেডিংয়ে বিদ্যুচ্চালিত গভীর নলকূপগুলো বন্ধ থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। যা নিয়ে কৃষকদের হাতাশা ও দুর্ভোগের শেষ নেই।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আউশ মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ৪’শ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে এবং প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পাট ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে। এছাড়াও মরিচ, বেগুন সহ বেশ কয়েকটি ফসল কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে।

তীব্র ভ্যাপসা গরম ও উপর বৃষ্টি না থাকা সহ বিদ্যুৎয়ের লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পাশাপাশি মাঠের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গাংনী উপজেলার অধিকাংশ মাঠে বিদ্যুচ্চালিত গভীর নলকূপ সেচ কাজে কৃষকদের একমাত্র ভরসা। পৌর এলাকায় ২৪ ঘন্টায় ১২-১৪ ঘন্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অতিরিক্ত বেশি। ২৪ ঘন্টায় গ্রামঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকছে ৫-৬ ঘন্টার মতো। তাও আবার ছিন্নভিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাম এলাকায়।

উপজেলার কাজিপুর গ্রামের কৃষক মিকাইল হোসেন বলেন, ‘২ বিঘা ধান লাগিয়েছি ১৫ দিন হচ্ছে। এই কয়দিনে ধানের জমিতে সেচ দিয়েছি ৩দিন। আমিতো তাও ৩দিন পেয়েছি অনেক চাষি সেচ দিয়ে ধান লাগানোর পর আর সেচ পায়নি। কারেন্ট এই আসছে তো এই চলে যাচ্ছে এরকম অবস্থায় চলছে।’

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রোদ গরমে জমিতে পাট সব শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচ দেওয়া প্রয়োজন কিন্তু যারা ধান লাগিয়েছে তাঁরাই এখনো সেচ পায়নি। আমরা কি করে এর মধ্যে পাটে পানি দেওয়ার জন্য ভীড় জামাবো! লোডশেডিং ঝামেলা না হলে কোন সমস্যায় ছিলো না।

বালিয়াঘাট গ্রামের কৃষক বাদল হোসেন বলেন, ‘কয়েক বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়ে এখন পানি দরকার কিন্তু বিদ্যুৎচ্চালিত মোটর অকেজো হয়ে যায় বিদ্যুৎ না থাকায়। আমার জমিতে সেচ দিতে পারলে গাছে দ্রুত মরিচ দাঁড়াত কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।’

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের আরেক কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ধান, পাট, মরিচ, লাগানো ঘাস সহ সবকিছুর সেচ দরকার। এখন অধিকাংশ জমি মোটরের সেচের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু লোডশেডিং হওয়ায় কৃষকদের খুব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।’

গাংনী উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি মো: হারুন অর রশীদ বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে বিদ্যুচ্চালিত গভীর নলকূপ চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে নলকূপ মালিকপক্ষকে। কৃষকদের অভিযোগের শেষ নেই। যেহেতু লোডশেডিং সারাদেশে একযোগে হচ্ছে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য। তবে পৌর এলাকা আর গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে কতৃপক্ষ রীতিমতো ছলচাতুরী করছে; এটা উচিত না।’

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, দাবদাহের সাথে লোডশেডিং দুটোর ফলে মাঠের অনেক ফসলের সেচ ও উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।