জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ বলেছেন, অনিতিবিলম্বে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সকল ধরণের অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। ২০২৩ সালের মার্চে সরকার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দু পাশে অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু কোনো বিশেষ ব্যক্তির কলকাঠি নাড়ানোর কারনে কয়েকটি দোকান ভাঙ্গার পর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। গাংনী থেকে কুষ্টিয়াগামী রাস্তার বাম পাশের একটি বড় সংখ্যক অবৈধ স্থাপনা এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোন কারনে সেগুলো এখনো অপসারণ করা হয়নি প্রশাসনের কাছে সে প্রশ্ন করেন তিনি।
প্রশাসনকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরে রাস্তা নির্মাণ সম্পূর্ণ করার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে একথা বলেন তিনি।
আজ শনিবার বিকালে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরের বড়বাজার এলাকায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বোরহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক ও সহকারী এ্যাট্রনি জেনারেল আ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, গাংনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা রুহুল আমিন, এনসিপির জেলা সংগঠক মোজাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা সরোয়ার হোসেন, জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাকিল আহমাদ আরও বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরের অবৈধ স্থাপনা না ভাঙ্গার জন্য কারা কারা কত টাকা লেনদেন করেছেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। অবৈধ স্থাপনা কেনো ভাঙ্গা হয়নি জনগণের কাছে তার জবাবদিহিতা করতে হবে। জবাবদিহিতা না করলে কার কাছে কত টাকা খেয়েছেন কারা কারা খেয়েছেন সেটাও প্রকাশ করা হবে। সেদিন পালাতে হবে।
রাস্তার দুপাশে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করা প্রসঙ্গে সাকিল আহামদ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ অভিযানন বন্ধের সাথে জড়িত।
সাকিল আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের যতগুলো বড় রাস্তা বাস্তবায়ন হচ্ছে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ তার মধ্যে একটি। রাস্তাটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও গাংনী উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় এক শ মিটার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যার কারণে, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রাস্তাটিতে চলতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, রাস্তা নির্মাণের কাজ আটকে থাকলে এই ঠিকাদার কাজটি করতে পারবেনা। পরে ২/৪ বছর এই রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবেনা। ফলে এলাকার মানুষের দূর্ভোগ আরও বাড়বে।
তিনি সড়ক বিভাগকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামীকাল থেকে এই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে শেষ হতে হবে। এই রাস্তা নির্মাণের মুল সমস্যা তৈরী হয়েছে ইন্টারসেকশন নিয়ে। এই ইন্টারসেকশনের সমাধানও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হতে হবে।
তিনি জেলা প্রশাসক ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ করেন ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য। রাস্তা নির্মাণ কাজ কেউ বাঁধা দিলে জনগনকে সাথে নিয়ে লাঠি নিয়ে দাাঁড়িয়ে থাকা হবে।
তিনি বলেন, কেউ অর্থনৈতিক বা অন্যকোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণ বাঁধাগ্রস্থ করতে চাই তাদের আমরা হুশিয়ারী করতে চাই, আপনারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেননা।
তিনি বলেন, যে জণগন ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভয় পাইনি, সেই জণগন আপনার চোখ রাঙানি কিম্বা হুমকি ভয় পাইনা।
গাংনী পৌর সভার ড্রেন নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে সাকিল আহমাদ বলেন, পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে নির্মাণে আকাঁ বাঁকা সাপের মত করা হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন “ বাড়ির সামনে ভাঙবোনা দাও টাকা, বাড়ির সামনে ড্রেন নির্মাণ না করে ড্রেন অন্যদিকে চাপিয়ে দেবো দাও টাকা। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তাদের ফিরে আসার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, আপনারা জণগনের ও এলাকার উন্নয়নের বিপক্ষে দাঁড়াবেননা। আপনারা গাংনীর জণগন ও উন্নয়নের বিপক্ষে দাঁড়ালে প্রতিহত করবে।
তিনি তিনটি দাবী জানিয়ে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকাশ করুন রাস্তার পাশে আপনাদের যে জমিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে কেনো ভাঙ্গা হয়নি? যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে অনতিবিলম্বে তা অপসারণ করতে হবে। আগামীকাল থেকে মুল রাস্তার কাজ শুরু হতে হবে। মুল রাস্তার কাজ শুরু হলে ইন্টারসেকশনের কাজ শেষ করতে হবে। এখানকার ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। কোনো প্রকার অনৈতিক সুবিধা না দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সেখানে কেউ বাঁধা দিলে জণগনের সাথে তাঁদের লড়াই বাঁধবে। কেউ ভয় পাবেননা। ভয় পাওয়ার দিন শেষ। এখন পরিবর্তনশীল বাংলাদেশে পরিবর্তণ চাই। কোনো লেজুড়বৃত্তি ও চাঁদাবাজদের ভয় পাবেননা।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা ব্যায়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও গাংনী উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় এক শ মিটার রাস্তা নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।