গাংনীতে সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে গৃহহীন তিন নারী

গাংনীতে সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ ও গৃহহীণ হয়ে তিন নারী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে ধানখোলা গ্রামে সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন নারী সুদ ব্যবসায়ীদের নির্মম নির্যাতন অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গাংনীর ধানখোলা গ্রামের আহমেদ আলীর মেয়ে শিল্পী জানান, সাংসারিক প্রয়োজনে তিনি হলপাড়ার মকবুল হোসেনের স্ত্রী বানীয়ারা খাতুনের কাছ থেকে তিন ধাপে তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেন। শর্ত মোতাবেক শিল্পী খাতুনের স্বর্ণের দুল, চুড়ি চেইনসহ ব্যাংক একাউন্ট তিনটি ব্লাঙ্ক চেক জমা রাখেন সুদ ব্যাবসায়ীরা।
২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৩ লাখ টাকা প্রদান করার পরও টাকা পরিশোধ হয়নি মর্মে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে সুদ ব্যবসায়ী বানীয়ারা খাতুন। টাকা গ্রহিতা শিল্পীয়ারা টাকা পরিশোধ করেও স্বার্ণালংকার ও চেক ফেরত পাইনি আজো।

শিল্পী আরো জানান, টাকা গ্রহণের সময় তার কাছ থেকে আড়াই ভরি সোনার গহনা ও চেকের তিনটি ফাঁকা পাতা জমা নেয় বাণীয়ারা। তার ধানখোলা গ্রামের জমিসহ বাড়ী বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করার পরও গহনা আর খালি চেক ফেরত দেয়া হয়নি।

শরিফার নামে মুন্টুর ছেলে নুরুজ্জামান বাদি হয়ে আদালতে একটি মামলা করলে মামলার তদন্ত করেন গাংনী উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস। সেখানে দুপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা ও স্বাক্ষ্য প্রমানের অভাব থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনে শরিফা খাতুনের নামে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পুলিশের কাছে সুদ ব্যবসায়ী বানীয়ারা অভিযোগ করার কারণে পুলিশ বারবার তার খোঁজ করছেন। বাধ্য হয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সুদ ব্যাবসায়ীদের অত্যাচারে বাড়ি ছেলে বছর খানেক পালিয়ে ছিলেন শিল্পী। শিল্পীয়ারা খাতুনের স্বামী একজন মালেশিয়া প্রবাসী। ১০ বছর আগে মালেশিয়াতে যান শিল্পীর স্বামী। এসব কথা শোনার পর শিল্পীর স্বামী যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সুদ ব্যাবসায়ীদের নির্মম ছোবলে শিল্পীর আশ্রয় হারিয়েছে, অন্যদিকে ছাড়ছেন স্বামীর সংসার।
চৌগাছা গ্রামের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী উষা খাতুন জানান, গাংনী বাজারে গার্মেন্ট্সের দোকান দেয়ার জন্য বানীয়ারার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবদি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরও আরো টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবী করে বানীয়ারা। টাকা নেয়ার সময় তার কাছ থেকেও ব্লাঙ্ক চেক নেয়া হয়।

উষা জানান, তিনি হলপাড়ার বাড়ি মিজান দারোগার কাছে বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেছেন।
তিনি বলেন, বানীয়ারা মুন্টুর ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে শতকরা ১০ টাকা হারে টাকা নিয়ে অন্যত্র শতকরা ২০ টাকায় সুদে ব্যবসা করেন।
অপরদিকে একই ব্যাক্তির কাছ থেকে ২০১৭ সালে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন চৌগাছার সামসুজ্জামানের মেয়ে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শরিফা খাতুন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। আরো টাকা পাওনা রয়েছে মর্মে দাবী করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। টাকা নেয়ার সময় যে তিন ভরি সোনার গহনা জমা রেখেছিল তাও ফেরত পাননি শরিফা খাতুন।

তিন নারী আরো জানান, হাসপাতাল বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মন্টুর স্ত্রী মাহফুজা ও বানীয়ারা সুদের ব্যবসা করেন। মাহফুজার কাছ থেকে শতকরা ১০ টাকা হারে সুদে টাকা নিয়ে বাণীয়ারা ২০ টাকা হারে অন্যজনের কাছে টাকা লগ্নী করেন। কোন টাকা অনাদায় থাকলে বানীয়ারার স্বামী মকবুল, মাহফুজার স্বামী ওষুধ ব্যবসায়ী মন্টু ও তার ছেলে বিজয় স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়। তাদেরকে বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেও শান্তি নেই। ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে সুদ ব্যবসায়ীরা। গহনা, বাড়িসহ সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলি।

শুধু এরাই নয় এমন অসংখ্য পরিবার রয়েছেন যারা ওই সুদ ব্যাবসায়ীদের অত্যাচার নিপীড়ন শোষন নিরবে সহ্য করছেন। শিল্পী, শরিফা ও উষার মত অনেকেই বাড়ি ঘর বিক্রি করে পথে পথে ঘুরছেন।

গাংনী থানার সেকেন্ডে অফিসার হাবিব জানান, মামলা এসেছিল তবে টাকা পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে তাছাড়া কোন চাপ বা হুমকী দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে মন্টুর ছেলে মিঠু বলেন, শরিফা আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। হঠাৎ একটি অনুষ্ঠানে যাবেন এমন মিথ্যা বলে আমার স্ত্রী ও মায়ের সাথে স্বর্ণের দুটি গহনা নিয়ে যায়। পরে সে আর ফেরৎ দেয়নি। বরং আজকাল করে ফেরত না দিলে আমরা গহনার জন্য অভিযোগ করি, সুদের টাকার জন্য নয়।
এবিষয়ে মন্টুর ছেলে বিজয় জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর জন্য তিন লাখ টাকা নিয়েছিলেন শিল্পীয়ারা। তার কাছ থেকে নেয়া অনেক প্রমান রয়েছে। পরে আমাদের টাকা পরিশোধ করেনি। উপরন্ত সে বছর খানেক আগে ঢাকায় পালিয়ে ছিলেন। কয়েকমাস আগে তিনি বাড়িতে এসেছেন এমন তথ্য পাওয়ার পর গ্রাম্য সালিশ হয়েছে। তার আত্নীয়স্বজনরাও টাকার বিষয়ে জানেন। তবে বিনা স্বার্থে কেউ কাউকে টাকা ধার দেয়না এটা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমিও স্বার্থ বা লাভের জন্য দিয়েছিলাম এমন কথা স্বীকার করে বলেন তারা আমাকে যে ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে তার প্রমাণ নেই। থানায় অভিযোগ দিয়েছি ব্যবস্থা না হলে আদালতে যাব বলে জানান বিজয়।