
মেহেরপুরের গাংনী বাজার উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে দিনব্যাপি লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে গাংনী ফুটবল মাঠে খেলার উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন।
কালের বিবর্তনে সামন্ত প্রভুদের খাজনা আদায়ের লাঠিয়ালদের সেই নিষ্ঠুরতা এখন মানুষের বিনোদন যোগাচ্ছে। লাঠিয়ালদের কলা-কৌশলও বেশ নজরকাড়া। প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে নানা কৌশলে লাঠি চালাচ্ছেন একপক্ষ। অন্যপক্ষও আত্মরক্ষার্থে অবলম্বন করছেন নানা কৌশল। এ যেন আনন্দদায়ী পাতানো এক যুদ্ধ! হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী পাতানো যুদ্ধে মুগ্ধ হয়েছেন গাংনীর হাজারও দর্শক।
খেলার শুরুতেই বাদ্যের তালে তালে লাঠিয়ালদের নাচ, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষামূলক কসরত যেন দর্শককে বিমোহিত করেছে। লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে গাংনীতে যেন সৃষ্টি হয়েছে এক লোকজ উৎসবের আমেজ, যেখানে জড়ো হয়েছে হাজারও বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ ও শিশু। এ যেন আনন্দদায়ী পাতানো এক যুদ্ধ! হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী পাতানো যুদ্ধে মুগ্ধ হয়েছেন গাংনীর হাজারও দর্শক।
খেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলাকে পুনরুদ্ধার করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা এবং সুস্থ ধারার সামাজিক বিনোদন প্রদান, মাদক ও জুয়ামুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে এই খেলাটির আয়োজন করা হয়েছে।
গাংনী বাজারপাড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, জনপ্রিয় এই খেলাটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও মোবাইল আসক্ত থেকে মুক্ত রেখে শরীরচর্চায় আগ্রহী করতে খেলাটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও তিনি খেলাটি টিকিয়ে রাখতে সকলকে পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান জানান।
স্কুল ছাত্রী রোমানা খাতুন বলেন, আমি কখনো লাঠিখেলা দেখিনি। আজকে এই খেলাটি দেখে আমি মুগ্ধ। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। লাঠিখেলা চর্চা করলে আত্মরক্ষায়ও সহায়ক হতে পারে।
চাঁন্দামারী গ্রামের দর্শক আয়ূব হোসেন বলেন, হারিয়ে যাওয়া খেলাটিকে বারবার আয়োজনের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। খবর শুনে আমি সেই দশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে লাঠিখেলা দেখতে ছুটে এসেছি। ছোটবেলায় আমরা দল বেঁধে বিভিন্ন এলাকায় লাঠিখেলা দেখতে যেতাম। এখনকার ছেলে-মেয়েরা শুধু মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে তারা সামাজিকতা, ভদ্রতা, বড়দের সম্মান ও ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করতে ভুলে যাচ্ছে। পুরানো খেলাধুলার মধ্যেই আমাদের আসল সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে। সেগুলোকে আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে।
শিশিরপাড়া লাঠিয়াল দলের টিম লিডার আনিছুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই খেলায় যেমন দর্শকরা আনন্দ পায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার নানা কৌশলও শেখা যায়।
খেলার আয়োজক কমিটি গাংনী বাজারপাড়া উন্নয়ন সংস্থার উপদেষ্টা মকবুল হোসেন মেঘলা বলেন, যুব সমাজকে খেলা-ধুলার মাধ্যমে মাদকমুক্ত ও জুয়ামুক্ত করতে এই আয়োজন করা হয়েছে। মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠিখেলা। জুয়া, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নতুন প্রজন্ম গড়তে এ ধরনের খেলা টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য এটি বিনোদন হলেও একসময় লাঠিখেলাটি আত্মরক্ষার রণকৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আগে জেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত একটি লাঠিয়াল দল থাকত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খেলাটি প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকদিন পর গাংনীতে লাঠিখেলার আয়োজন হয়েছে। এমন আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।
এর আগে সকাল ১০টার সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে খেলাটির উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন। গাংনী বাজারপাড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দাল হক এবং মেহেরপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী।
খেলা শেষে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের মধ্যে প্রধান অতিথি পুরস্কার বিতরণ করেন।