গাংনীর ওসির ওপর বেআইনি ক্ষোভ ঝাড়লেন উপজেলা চেয়ারম্যান

গাংনীর ওসির ওপর বেআইনি ক্ষোভ ঝাড়লেন উপজেলা চেয়ারম্যান

একটি ট্র্রাক উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি সহায়তা না পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের ওপর বেআইনি ক্ষোভ ঝাড়লেন গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক।

গতকাল শনিবার বেলা ১১ টার দিকে ২৫মার্চ আলোচনা সভা শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে দাঁড়িয়ে গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাককে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তবে ওসি আব্দুর রাজ্জাক ট্রাক উদ্ধারের বিষয়টি আইনি জটিলতায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে দাবী করে জানান, ট্রাকের বিষয়ে আদালতে মামলা রযেছে। আদালত পর্যন্ত যে বিষয়টি গড়িয়ে যায় সেই বিষয়টি আদালত সুরাহা না দেয়া পর্যন্ত পুলিশের কিছুই করা থাকেনা।

গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক জানান, তার নিজ নামীয় একটি ১০ চাকা বিশিষ্ট ট্রাক যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঝিনাইদাহ ট-১১-১২-৮১। খলিশাকুন্ডি গ্রামের হাজি আবুল হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেনের কাছে ৩০,২৪,০০০ টাকা মুল্য নির্ধারন করে ৪৮ কিস্তিতে বিক্রির চুক্তিপত্র করা হয়। প্রতি কিস্তি ৬৩ হাজার টাকা হিসাবে ৩০২৪০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন শর্ত দেয়া হয় চুক্তিপত্রে।

চুক্তি অনুযায়ী ফারুক হোসেন ৩১ কিস্তির মাধ্যমে ২০,০৩০০হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকী ১০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা কিস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পরিশোধ করতে না পারায় বাকী কিস্তির টাকা প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা করে পরিশোধ করার নতুন শর্তে আরও একটি চুক্তি নামা সম্পাদন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী পরপর তিন কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে দাতা তার মালিকানা ফিরে পাবেন বলেও চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে । ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যে সমস্ত টাকা পরিশোধ করার শর্তে ফারুক হোসেন ট্রাকটি গ্রহন করেন। এবং সমস্ত টাকা পরিশোধ হওয়ার পর ফারুক হসোনে তার নামে কাগজপত্র হস্তান্তর করে নেবেন। অথচ ৩ বছর পার হলেও চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করেনি ফারুক হোসেন। এমনকি আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি। বরং ট্রাকটি চুরি হয়ে গেছে বলে আমাকে লোক মারফত সংবাদ দেয় ফারুক হোসেন।

এবিষয়ে ট্রাকটি উদ্ধারের জন্য গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের পরামর্শে আমি গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ করা সত্বেও ট্রাকটি খূঁজে পেতে ব্যার্থ হয় গাংনী থানা পুলিশ। অন্যদিকে আমার লোকজনকে দিয়ে ট্রাকটি খোঁজ করার চেষ্টা করি। অবশেষে গতকাল শুক্রবার ভোর রাতে খোঁজ পাই ট্রাকটি শেরপুরের লালিতাবাড়িতে রয়েছে। আমার লোকজন সেখান থেকে ট্রাকটি উদ্ধার করে খুলিশাকুন্ডি বাজারে নিয়ে আসে। ট্রাকটি পুলিশি সহায়তায় উদ্ধারের দাবী জানালে শনিবার সকালে গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক তার একজন এসআই আতিককে খলিশাকুন্ডিতে পাঠায়। সেখান থেকে ট্রাকটি উদ্ধার না করে আমার লোকজনকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয় এসআই আতিক। পরে আমি শনিবার ২৫ মার্চের আলোচনা শেষে ওসি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা বল্লে তিনিও বিষয়টি আমলে না নিয়ে টালবাহানা করেন। আমি এর আগে একটি উকিল নোটিশ করেছি। কিন্ত তাতেও কাজ হয়নি।

তিনি আরও জানান, একজন মানুষ যখন বিপদে পড়েন তখন পুলিশের কাছে সাহায্য চাই। পুলিশ সেই সাহায্যের পরিবর্তে যদি বিবাদির সাথে দহরমমহরম তৈরী করে তখনই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। আমার বেলাতে ঠিক এমনটাই ঘটেছে বলেও সাংবাদিকদের সামনে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আমি একজন জনপ্রতনিধি হিসেবে পুলিশের কাছ থেকে যদি এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হই তাহলে সাধারণ মানুষ কত টুকু সেবা পাচ্ছে গাংনী থানায় এ নিয়েও সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন তোলেন এমএ খালেক।

এদিকে গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতে মামলা থাকায় আদালতের নির্দেশনা না পেলে আমি ট্রাকটি উদ্বার করতে পারিনা। এখানে আইনি অনেক জটিলতা রয়েছে। তাছাড়া ট্রাকের সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথে থানা থেকে একজন এসআইকে খলিশাকুন্ডিতে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে ট্রাকের চালককে পাইনি। তিনি আরও জানান, খলিশাকুন্ডি আমার থানার বাইরে। এক থানার সমস্যা অন্য থানায় পড়লে আইনি সহায়তা ছাড়া একটি ট্রাক উদ্ধার করা সম্ভব না। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব ভুল বুঝে আমার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা আইনের মানুষ সব সময় আইনের মধ্যে থেকেই আমাদের চলতে হয়।