গাংনীর কাথুলী-খাসমহল সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী-খাসমহল বিওপি সড়ক নির্মাণের কাজে নিম্মমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ইটভাটা থেকে অযোগ্য আমা আদলা ইট দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি  টাকা ব্যায়ে রাস্তা নির্মাণের উন্নয়ন কাজ।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের যোগ সাজসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জনি এন্টার প্রাইজের স্বতাধিকারী সাহাবাজ উদ্দীন এই নিম্নমানের কাজ করছেন। তবে, জনি এন্টার প্রাইজের সত্বাধিকারী সাহাবাজ উদ্দীন বলেন, রাস্তা নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি, ভাল ইট দিয়েই কাজ করছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তরের তত্বাবধানে গাংনী উপজেলার কাথুলি থেকে খাসমহল পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা প্রায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ইটভাটা থেকে কুড়ানো ভাঙড়ি আমা ইট এনে একটি পাটের জমির পাশে জড়ো করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। রাস্তাটিতে সিডিউল অনুযায়ী গভীর করা হয়নি। এছাড়া নিম্নমানের বালির সাথে মেশানো হয়েছে মাটি। কাজের মান বুঝে নেওয়ার জন্য একজন উপসহকারী প্রকৌশলী ও ওয়ার্ক এ্যাসিসটেন্ট বা এলজিইডি অফিসের লোকজন সার্বক্ষনিক থাকার কথা সরেজমিনে এলজিইডির কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রকল্পের কাছে দেখা যায়নি। সেখানে শুধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইড দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত আলম হোসেন নামের একজনকে পাওয়া গেছে।

আলম হোসেন বলেন, লেবারদের দেখা শোনা ও মালামাল ঠিকঠাক করে রাখা আমার দায়িত্ব। আমি কাজের ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে পারবোনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই ফাঁকি দিয়ে করেছে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ। প্রথম দিকে ঠিকাদার ও এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলার পরেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি।

রাস্তার বিএমডাব্লিউ করার সময় মানহীন ইট ও গুড়ো ইটের রাবিশ দিয়ে করার কারনে গ্রামবাসি কাজে বাধা দেন। ফলে কিছুদিন কাজটি বন্ধ হয়েছিল। ঠিকাদার, গ্রামের মানুষের তোপের মুখে পড়েন। ওই সময় সামান্য কিছু ইট সরিয়ে নেন ঠিকাদার। পরে আবারো সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজসে নিম্নমানের ইট দিয়েই কাজ শুরু করে পূণরায়। কাজটিতে রুলার দিয়ে কমপেকশন করাও হয়নি ঠিকমত।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আধারে বিভিন্ন ইটভাটা থেকে তারা আদলা ইট নিয়ে এসে তড়ি ঘড়ি করে কাজটি শেষ করার পায়তারা করছে।

কাথুলীর যুবক পলাশ ও হাসান আলী বলেন, কমা ও গুইড়ু ইট দিয়ে এই রাস্তার নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এখানে কাজের সাইনবোর্ড দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারের লোকজনের মধ্যে একটা মাস্তানি ভাব পরিলক্ষিত হয়। কেউ এ কাজের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কাজের মান যাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাছে দাবীও জানান তারা।

ধলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, বাজে ইট দিয়ে রাস্তাটি তৈরী হচ্ছে। এর আগে খুড়াখুড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছিল ঠিকাদার। ভোগান্তিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। মানুষের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে এখন বলছে খারাপ করে হলেও রাস্তাটি হোক এটা চাই।

জনি এন্টারপ্রাইজের স্বতাধীকারী ঠিকাদার সাহাবাজ উদ্দীনের কাছে কাজের বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে ওই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ চলছে। নিম্নমানের ইট, বালির সাথে মাটি মেশানো ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। প্রতিবেদকের সাথে তিনি দেখা করারও প্রস্তাব দেন।

কার্য্য সহকারী (ওয়ার্কি এসিসটেন্ট)মহিদুল ইসলামকে কাজের সাইটে পাওয়া যায়না কেনো জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। তবে কত টাকার কাজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজটি সোয়া তিন কিলোমিটার। এই কাজের জন্য বরাদ্দ ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

উপসহকারী প্রকৌশলী আলাউদ্দীনের কাছে কাজ সমন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের দায়িত্ব আমার থাকলেও আমার কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। সব কিছুই আছে উপজেলা প্রকৌশলী স্যারের কাছে।

গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, আমি ঢাকাতে আছি। গাংনীতে ফিরেই বিষয়টি দেখবো। কোজের মান নিয়ে গ্রামবাসির ক্ষোভ ও সাংবাদিকদের সরেজমিনে গিয়ে কাজের মান ও ইটের বিষয়ে তাকে বললে আমি এখনি কাজ বন্ধ করে দিচ্ছি। তবে প্রকল্পটি দেড় কোটি টাকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ব্যাপারে মেহেরপুর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জেলা ও উপজেলা এলজিইডি অফিস রাস্তাটি নির্মাণের কোনো কাগজপত্র দেননি। এছাড়া রাস্তাটি নির্মাণের বরাদ্দের ব্যাপারে তিনজন তিন ধরণের তথ্য দিয়েছেন প্রতিবেদককে।

স্থানীয়দের ধারণা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজসে রাস্তাটিতে নিম্নমানের এসব উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদার কাজ না করেও বিল প্রদানের অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।