মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। চলতি বছরের ৯ মাসে এ উপজেলায় ৪৭৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ফলে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। গবাদি পশুর ভ্যাকসিন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম না থাকায় অ্যানথ্রাক্স দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার কাজিপুর, মটমুড়া, সাহারবাটি ও বামন্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের ক্ষত দেখা দিয়েছে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু-ছাগলের মাংস থেকেই মূলত মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাকটরেরিয়াজনিত রোগের জীবাণু। গ্রাম পর্যায়ে কোন পশু আক্রান্ত হলে তা জবাই করে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে মাংস। কম দামে আকৃষ্ট হয়ে অনেকে ছুটে যাচ্ছেন মাংস কিনতে। আক্রান্ত পশুর মাংস কাটা এবং রান্নার সময় সাবধানতা না থাকায় অ্যানথ্রাক্স জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। যার ফলে শরীরের দেখা দিচ্ছে ক্ষত ঘা। প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করায় নিরাময় হচ্ছে না। ক্ষত স্থানের আকার বাড়ার সাথে সাথে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে এসব রোগীদের। অসুস্থ পশু জবাই ও বিক্রি রোধে কোন পদক্ষেপ না থাকায় আশংকাজনকহারে বাড়ছে ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা।
গাংনী হাসাপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে উপজেলার ৮ জন রোগী হাসপাতালে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দেবীপুর গ্রামের ফুলঝুড়ি, মৌসুমী, মোহাম্মদপুর গ্রামের চামেলী,ভবানীপুরের সেলিম, বালিয়াঘাটের তানিয়া, কাজীপুরের আক্কাস আলী, হাড়াভাঙ্গার কামাল হোসেন, রাইপুর গ্রামের রেখা খাতুন।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের আফাজউদ্দিন জানান, তিনি বাজারে মাংসের ব্যবসা করেন। রোগাক্রান্ত গরুর মাংস নাড়াচাড়া করা কারণে তার শরীরে প্রথমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। পরে পরীক্ষা করে অ্যানথ্যাক্স রোগ ধরা পড়ে।
একই গ্রামের আক্কাস আলী জানান, একদিন গরুর মাংস কিনে বাড়ি নিয়ে এসে পািন দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিলাম রান্না করার জন্য। এর পরদিন থেকে শরীরে হাতে চুলকাতে শুরু করে এবং ঘায়ের মত গুটি দেখা যায়। গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে দেখালে তিনি বলেন অ্যানথ্রাক্স হয়েছে। পরে গাংনী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ খাচ্ছি।
উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেন জানান, তিনি বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে আনেন। সেই মাংস নাড়াচাড়া করার কারণে তার শরীরে ছোট ছোট ঘায়ের মত কি যেন দেখা যায় । পরে পরীক্ষা করে জানতে পারেন অ্যানথ্রাক্স হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ফারুক হোসেন জানান, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে অনেকেই গ্রামে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিলে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থেকে যায়, যা বিপদজনক। তাই এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলেই ঘরে চিকিৎসা না নিয়ে দ্রæত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়ার আহবান জানান।
গাংনী উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোত্তালেব আলী বলেন, গবাদী পশুকে শতভাগ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। তবে জনবল সংকটের কথা বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আবু সাঈদ বলেন, চামড়ার পাশাপাশি ফুসফুস ও খাদ্যনালীতেও অ্যানথ্যাক্স আক্রান্ত হয়। এর ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। সামাজিক সচেতনা তৈরির মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতা কার্যক্রম চালু রয়েছে।