
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একটি গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি ।
দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই গাংনীর রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলমান, তা কেবল স্থানীয় উত্তেজনা বাড়াচ্ছে না, বরং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথেও বড় বাধা সৃষ্টি করছে। একদিকে মনোনীত প্রার্থীর ধানের শীষের জন্য ভোট প্রার্থনা, অন্যদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ—এই দুই বিপরীতমুখী স্রোত বিএনপির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং সংহতির ওপর একটি কঠিন প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলিতে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ নতুন নয়। তবে গাংনীর ঘটনা কেবল সাধারণ ক্ষোভের প্রকাশ নয়; এটি একটি সুসংগঠিত বিদ্রোহ। দলীয় হাইকমান্ড সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনকে মনোনীত করার পরও, জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের অনুসারীরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের বিক্ষোভ মিছিল এবং মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি স্পষ্ট করে যে স্থানীয় নেতৃত্বে আস্থার ঘাটতি রয়েছে, যা দলের তৃণমূলের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ঠিক আগে এই ধরনের বিভেদ জনমনে ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং দলের মূল আদর্শ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।
দেখা যাচ্ছে, আমজাদ হোসেন তার নির্বাচনী প্রচারে দলের ঘোষিত '৩১ দফা কর্মসূচি' এবং তারেক রহমানের বার্তা নিয়ে ভোটারদের দুয়ারে যাচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে দলের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু যখন একই সময়ে দলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করে, তখন সেই ইতিবাচক প্রচেষ্টা ম্লান হয়ে যায়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মতো একটি মহৎ উদ্দেশ্য সফল করতে হলে প্রয়োজন ইস্পাত-কঠিন সংহতি। একটি শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলার কথা ছিল, কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল সেই মূল্যবান সময় এবং সুযোগের অপচয় করছে। সাধারণ ভোটারদের মনে এই প্রশ্ন জাগাচ্ছে যে, যে দল নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে পারে না, তারা কীভাবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করবে?
বিএনপি হাইকমান্ডের উচিত এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত এর সমাধান করা। হয় মনোনীত প্রার্থীকে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে, অথবা বিচক্ষণতার সঙ্গে এমন একটি সমাধান খুঁজতে হবে যা উভয় পক্ষের নেতৃত্বকে সন্তুষ্ট করে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনী মাঠে নামতে সাহায্য করে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে স্মরণ রাখতে হবে যে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, এবং দলের চেয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ সবার আগে।
গাংনীর চলমান পরিস্থিতি মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপির নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ারের প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা কেবল তখনই সম্ভব যখন দল তার ভেতরের বিভেদ মিটিয়ে একটি একক ও শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করবে। যদি এই দোটানা অব্যাহত থাকে, তবে তা শুধু একটি আসনের পরাজয় নয়, বরং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথেও একটি গভীর ক্ষত তৈরি করবে। সংহতি ফিরিয়ে আনাই এখন গাংনী বিএনপির জন্য একমাত্র অগ্নিপরীক্ষা।