ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটপাড়ায় অবস্থিত ঐতিহাসিক নীলকুঠি। ১৮৫৯ সালে নির্মিত হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে। কাজলা নদীর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশদের নির্যাতনের সাক্ষী এই ভাটপাড়া নীলকুঠি।
প্রায় ২৭ একর জমির ওপর ২০১৭ সালে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে এই পার্কটি বিনোদনের জন্য নির্মিত হলেও ধীরে ধীরে এখন এই পার্ক অপরাধকারীদের কাছে অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্কে নেই বিনোদনমূলক কোনো কিছুই। তবে এখন চলছে অসামাজিক এবং অশ্লীল কার্যকলাপ। পার্কের দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের হাত ধরেই এই অশ্লীলতা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, পার্কের মধ্যে দিনের বেলায় চলছে দেহব্যবসা এবং রাতের বেলায় চলছে মাদকসেবন। পার্কের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় পার্কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কে এখন কোনো পর্যটকের পদচারণা নেই। দিন দিন অপরাধকারীদের আস্তানায় পরিণত হচ্ছে পার্কটি।
পার্কে প্রবেশের পর দেখা যায়, ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ককে জঙ্গলে ঘিরে রাখা হয়েছে। পার্কের মধ্যে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে অশ্লীল ও অসামাজিক কাজের সুযোগ। স্থানভেদে সেখান থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। পার্কের মধ্যে দেহব্যবসা হচ্ছে ফুলবাগানের মধ্যে থাকা ভূতের ঘরে, ‘আইসল্যান্ড’ নামক আরেকটি ঘর এবং মেইন সড়কের সাথে বাউন্ডারির পাশে ঘেঁষে থাকা জঙ্গলের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি বেঞ্চ পাতানো হয়েছে সেখানে। যেখানে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ অসামাজিক অশ্লীল কার্যক্রমের সুযোগ করে দিচ্ছে পার্কের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। বিনিময়ে নিচ্ছে টাকা। ইকোপার্কে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় মাদকের রমরমা কারবার। ফুলবাগানের মধ্যে রাতভর চলে মাদকসেবনের আখড়া।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, পার্কের আইসল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা জামাল হোসেন এবং ফুলবাগানের দায়িত্বে থাকা সুমন হোসেন টাকার বিনিময়ে এ-সমস্ত অপকর্মের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে পার্কের মধ্যে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইসল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা জামাল হোসেন বলেন, গাংনী ইকোপার্কের সাথে ডিসি ও ইউএনওর মানসম্মান জড়িত, তাই এ ব্যাপারে সবাই মাথা ঘামায় না। পার্কের মধ্যে অনেক কিছুই হচ্ছে কিন্তু কোনো কিছু লেখার কিংবা করার আগে আমাদের সাথে দেখা করেন।
ফুলবাগানের দায়িত্বে থাকা সুমন হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ইকোপার্কের গেটের দায়িত্বে থাকা আসমাউল হুসনা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই পার্কের পরিবেশ ঠিক হোক। এ সমস্ত অশ্লীল অসামাজিক কাজ ফুলবাগানের দায়িত্বে থাকা সুমনের হাত ধরেই পার্কে শুরু হয়। সুমনের দেখাদেখি জামাল বিষয়টি শিখেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পার্কে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। আমরা চাই পার্কে সংস্কার কাজ হোক এবং বিনোদনের পরিবেশ ফিরে আসুক, তখন এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
সচেতন মহলের দাবি, গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কে বিনোদনের পরিবেশ ফিরে আসুক এবং যারা এই সমস্ত অশ্লীল অসামাজিক কার্যকলাপ করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসমাতারা বলেন, পার্কটি ডিসি ও ইউএনও স্যারকে বিষয়টি অবগত করবো।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।