গাংনীর সাব-রেজিস্টার বগুড়ার আলোচিত কিশোরী অর্থি’র পাশে

ঈদের দু’দিন আগের কথা। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়াতে অর্থি নামের এক কিশোরী তার দাদার সাথে বগুড়ার ঘোড়াধাপ হাটে পরিবারে পালিত প্রিয় নবাব নামের একটি গরু বিক্রয়ের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নবাব-(গরুটিকে) জড়িয়ে ধরে কান্নার প্রকাশিত ছবি ভাইরাল হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। ছবিটি তুলেছিলেন রাফিদ ইয়াসির নামে স্থানীয় এক ফটো সাংবাদিক। মানুষের সাথে একটি গৃহপালিত পশু (নবাব) ভালবাসা মুগ্ধ করে দেশ-বিদেশের মানুষকে। নবাবকে বিক্রি করায় কিশোরী অর্থি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।

সারাদিন কান্না করে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে অর্থি। তার চাওয়া বিক্রি হওয়া নবাব-কে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। অভাবের সংসারে অর্থির পিতা আকরাম আলী ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় নবাব (গরু) টিকে বিক্রি করেন স্থানীয় গরু ব্যাবসায়ীর কাছে। এমন খরব ও ছবি এবং কিশোরীর মমতাবোধ দেখে অর্থির মনের শূন্যতা কৈশোরে ফিরিয়ে নিয়ে যায় গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানাকে। অর্থির নবাব-বিরহে শামিল হতে সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে অর্থিকে খুঁজে পেলে একটি গরুর বাছুর উপহার দেবার স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুক ওয়ালে লেখা পোস্টটি ভাইরাল হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে ফটোসাংবাদিক রাফিদের খোঁজ মেলে। ফটো সাংবাদিক রাফিদ অর্থিকে খুঁজে দিতে সহায়তা করেন গাংনীর সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানাকে।

ততক্ষণে প্রথম আলো ট্রাস্ট তাকে একটি বাছুর গরু যার নাম ছোট নবাব উপহার দেয়। অর্থির জন্য যে সমবেদনা তা পাশ কাটিয়ে থাকতে পারেনি গাংনীর সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা। রাফিদের কাছে ঠিকানা নিয়ে ছুটে যাই অর্থির বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার হাজরা দিঘি গ্রামে। আশরাফি সুলতানা অর্থি (৯) বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদিঘি গ্রামের আকরাম হোসেনের মেয়ে ও হাজরাদিঘি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের ৩য় শেনীর ছাত্রী। অর্থির লেখা পড়ার খরচসহ তার হাতে শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন মাহফুজ রানা। অর্থের অভাবে অর্থিও লেখাপড়া যেন বিগ্নীত না হয় সে বিষয়ে সার্বক্ষনিক খোঁজ নেন তিনি।

মোবাইল ফোনে অর্থির বাবা আকরাম আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছোট বেলা থেকেই নবাব-কে খেলঅর সাথি হিসেবে ভালবাসতো অর্থি। নবাবের শুন্যতা অর্থির মন থেকে মুছতে পারছিনা। দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই ফোনে শান্তনা দিচ্ছে। গাংনী থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আমার বাড়িতে মাহফুজ রানা এসেছেন এটা অনেক পাওয়া। তিনি যেমন মানবিক হয়ে ছুটে এসেছেন আমার মেয়ে অর্থিকে শান্তনা সহায়তা দিতে আমিও আশাকরি আমার মেয়ে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের পাশে থাকবে। মর্মাহত অর্থি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায়,আমি চেষ্টা করেও নবাবকে ভুলতে পারছিনা। মাহফুজ রানা স্যারকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানায়।

গাংনী সাবরেজিস্টার মাহফুজ রানা বলেন, অর্থিও ঘটনাটি জানতে পেরে আমি খুবই কষ্ট ও ব্যাথিত হয়েছি। তার এই ঘটনা আমাকে আমার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তাই ছুটে গিয়েছি অর্থি’র কাছে। আমি আশা করি অর্থি একদিন মানুষকে সেবা করবে।