গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেন্ডারে স্বাক্ষর জালিয়াতি

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২১-২২ অর্থ বছরে শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (এম.এস.আর) খাতে এক কোটি ২১ লাখ টাকার টেন্ডারে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে।
টেন্ডার কমিটির ৬ সদস্যের মধ্যে দুইজন সদস্য তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
এরা হলেন, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল হোসেন ও তৎকালিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাঃ আলাউদ্দীন। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক ডাঃ ফয়সাল হারুনের স্বক্ষরও জালিয়াতি করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।
৬ সদস্যের টেন্ডার কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান লিটন, মেডিকেল অফিসার মারুফ হাসান, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল হারুন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফেরদৌস পারভেজ।
তবে যদিও টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরুতেই হাসপাতালের আর.এম.ও ডাঃ মোহাম্মদ খোকন রেজার নাম ছিলো থাকলেও টেন্ডারের মাঝখানে তার নামটিও পরিবর্তন করে অন্য এক চিকিৎসককে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার বানিয়ে কমিটিতে নাম দেওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যানুযায়ি ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২১-২২ অর্থ বছরের চিকিৎসা শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (এম.এস.আর) খাতে পত্রিকায় একটি টেন্ডার প্রকাশ করে। পরে ৯ জন ঠিকাদার টেন্ডার জমা দেন।

সেখানে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ঢাকার মেসার্স আইয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেহেরপুরের জোহা এন্টার প্রাইজ, ঢাকার সাহিদা ট্রেডার্স ও মেসার্স আরিয়া ট্রেডার্সের সর্বনিম্ন ও সমদরের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ঐ কর্মকর্তা তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাওয়ে দেবার চেষ্টা করছেন।

তবে, বিষয়টি নিয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান লিটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর জাল নয় বলে দাবি করলেও পরে তিনি ভূল স্বীকার করে আর একটি কাগজ দেখান। যেখানে ঐ কমিটির দুইজন সদস্য হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান লিটন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফেরদৌস পারভেজের স্বাক্ষর রয়েছে।
দাবি করা হয় দুই জনের স্বাক্ষর দিয়ে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। অন্য কেউ হয়তো ৬ জনের স্বাক্ষর করেছেন। দুই জনের স্বাক্ষর দিয়ে টেন্ডারের কাগজ পাঠানো যায় কিনা তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি।
সাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঐ টেন্ডার প্রক্রিয়া কমিটির সদস্য গাংনী উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, এ স্বাক্ষর আমার হতে পারেনা। কারণ আমি স্বাক্ষর করার পর তারিখের জায়গায় কখনই ডট ব্যবহার করিনা। তাছাড়া স্বাক্ষরটিও আমার সাক্ষরের সাথে মিল নেই। কেউ আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হুশিয়ারিও দেন তিনি।
ঐ কমিটির অপর সদস্য গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাঃ আলাউদ্দীন বলেন, এপ্রিলের আগেই আমি গাংনী উপজেলা থেকে মুজিবনগর উপজেলায় বদলি হয়ে এসেছি। আর এ স্বাক্ষরও আমার করা নয়। আমার স্বাক্ষরের সাথে বেশ কয়েক জায়গায় অমিল রয়েছে।
কমিটির সদস্য ডাঃ ফয়সাল হারুন বলেন, দেখে মনে হচ্ছে এটি আমার স্বাক্ষর। তবে ১৬ এপ্রিল আমি কোন কাগজে স্বাক্ষর করেছি কিনা তা মনে করতে পারছিনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান লিটন ভুল স্বীকার করে বলেন, আমার কাছ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দ্রুত কাগজটি চেয়েছিলো। আমি উপস্থিত দুইজনের স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। তারপর কি হয়েছে আমার কিছুই জানা নেয়। শুধুমাত্র দুইজনের স্বাক্ষর করে এমন কাগজপত্র পাঠানো যায় কিনা এমন পশ্নের জবাবে কোন সদুত্তোর মেলেনি।
অন্যদিকে ডাঃ খোকন রেজাকে কেন কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঐ চিকিৎসক হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে বিনা ছুটিতে এক মাস উপস্থিত ছিলেননা। তাই তাকে না জানিয়ে কাজের সুবিধার্থে তার নাম বাদ দিয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারের নাম কমিটিতে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। টেন্ডার প্রক্রিয়াটির বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের ব্যাপার। আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থ্য গ্রহণ করবো।