গাংনী থানায় ভুক্তভোগীদের মানবপাচার মামলা

গাংনী থানায় ভুক্তভোগীদের মানবপাচার মামলা

অবশেষে আদম পাচারকারীর দালালদের গোপন ক্যাম্প থেকে ১০৪ যুবককে উদ্ধার করেছে মালেশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালেশিয়ার সালাক সালাতন নামের একটি ক্যাম্প থেকে তাদের আটক করেন পুলিশ।

আটক যুবকদের পরিবারের লোকজন ও মালেশিয়ার সালাক সালাতন ক্যাম্পে বন্দী গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহমান, আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুস সালাম মোবাইল ফোনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সাহেবনগর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, ব্রজপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম, কল্যাণপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ, আব্দুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সহ কয়েকজন বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মুছা ইন্টারন্যাশল নামের আদম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক সাহেবনগর গ্রামের মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমকে প্রধান আসামি ও একই গ্রামের আব্দুল হাদি ওরফে সুরজের ছেলে আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হাদি, রঞ্জিত মন্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম, নুর ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান, নুর মোহাম্মদের ছেলে আরিফুল ইসলামকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

২০১২ সালের মানব পাচার আইনের ৬(২)/ ৭/৯/১০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। গাংনী থানার মামলার নং ৩২ তাং ২৮/০২/২৪ ইং।

গাংনী থানার তদন্ত অফিসার মনোজিত কুমার নন্দী মামলার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সংঘবদ্ধ মানবপাচারের সদস্য অর্থের বিনিময়ে লোক পাঠিয়ে প্রতারণা ও জবরদস্তি মুলক শ্রমে বাধ্য করার অপরাধে মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার একজন বাদি সাহেবনগর গ্রামের গ্রামের আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার ছেলে আব্দুস সালামকে ভাল কাজ দেবে বলে বলে মুসা কলিম ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। প্রায় ৪ মাস আগে সে মালেশিয়াতে নিয়ে একটি ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। ছেলে আমাকে গত সোমবার বিকালে (বাংলাদেশ সময়) মোবাইল ফোনে জানান, আমাদের সালাক সালাতন ক্যাম্পে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। অর্ধ শত যুবকদের উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর কথা হবেনা। চিন্তা করবেন না।

সাহেবনগর গ্রামের সাগরিকা খাতুন বলেন, সংসার সুখের জন্য ভিটে মাটি ও ধার দেনা করে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম আদম ব্যপারির দাল সাহবনগর গ্রামের সুরজ আলীর হাতে। আমার ছেলে শাহীন আলমকে মালেশিয়া নিয়ে একটি ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৪ মাস আটকে রেখেছে। সোমবার সেখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ আমার ছেলেসহ প্রায় শতাধিক যুবককে উদ্ধার করেছে। এখন আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। তিনি বলেন, হাড়াভাঙ্গা, সাহেবনগর, সহড়াতলা, কাজিপুর এলাকার প্রায় তিন শতাধিক যুবকের পরিবারে শুধু হতাশা আর কান্নার রোল।

এদিকে আদম পাচারকারী সাহেবনগর গ্রামের প্রধান আদম ব্যবসায়ী মুছা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইঞ্জিনয়ার মুসা কলিম, সুরজ আলী, রাজু আহমেদ, তোফাজ্জেল মাষ্টারসহ তাদের লোকজন বাড়িঘর ছেলে পলাতক রয়েছেন।

মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, স্থানীয় গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক মাজেদ মাস্টার, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরজ ও তার ভাই আওয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের আশ্বাসে তারা মালয়েশিয়ায় আসেন।

ক্যাম্পে আটকে থাকা যুবকরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ৪/৫ মাস আগে এখানে এসেছি। আমাদেরও এই ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আজকে শতাধিক যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে মালেশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ।