গাংনী পৌরসভা নির্বাচন: ত্রিমুখী লড়াই

এম এফ রুপক
কে হবে গাংনী পৌরবাসীর অভিভাবক, কে ধরবে গাংনী পৌরসভার হাল, কে হবে গাংনীর নতুন মেয়র। নৌকার মাঝি সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে পারবে, নাকি পুনরায় সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদের মেয়র হবে, নাকি বিএনপি মনোনীত আসাদুজ্জামান বাবলু হবেন নতুন মেয়র। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গাংনী পৌরবাসীর মধ্যে। সবকিছু ঠিক থাকলে এমন নানা জল্পনা কল্পনার অবসান হবে আগামী ১৬ জানুয়ারী। দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাও বেশ তুঙ্গে উঠেছে। ঢাক-ডোল পিটিয়ে প্রতিদিনই জানান দিচ্ছেন তাদের প্রার্থীতা। যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে, চাচ্ছেন ভোট।

দ্বিতীয় ধাপে পৌর নির্বাচনের মধ্যে আগামী ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাংনী পৌরসভা নির্বাচন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে।

আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহরের শেষ দিন ও ৩০ ডিসেম্বর প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হবে। পৌর নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত ৫ জন মেয়র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে আহাম্মেদ আলী, বিএনপি থেকে আসাদুজ্জামান বাবলু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আবু হুরাইরা, সতন্ত্র আশরাফুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই আনারুল ইসলাম। তবে সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ায় তার ছোট ভাই আনারুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় গাংনী পৌর নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও ৯ টি ওয়ার্ডে ১০ সংরক্ষিত মহিলাসহ ৫০ জন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।

তবে গাংনী পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভোটারদের মতামত অনুযায়ী জানা গেছে, সাবেক মেয়র নৌকার মনোনীত প্রার্থী আহম্মেদ আলী ও সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম এর মধ্যে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি।

একদিকে যেমন ক্ষমতা পুররুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে নৌকার প্রার্থী আহম্মেদ আলী অপর দিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টায় সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম।

অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু’র নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা বেশ চোখে পড়ার মতো। সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছে নিয়মিত। নতুন মেয়র হওয়াতে বাবলুকেও সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে দেখছেন গাংনী পৌরবাসী।

২০১৫ সালে গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহম্মেদ আলী পরাজিত হয় সতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম এর কাছে। ২০১৫ যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে সকলকে একসাথে নিয়ে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবে। এমনটায় আশা করছেন আহম্মেদ আলী।

তবে অনেক ক্ষেত্রে বির্তকিত বক্তব্য দিয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছেন এই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। দল গোছাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা দিয়েছেন। নৌকাকে বিজয় করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

গতবারের যাবতীয় কোন্দল মিটিয়ে আমরা এক পথে হাটছি। এবারের বিজয় আমাদের হবেই। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে বলেন, আমি মেয়র থাকা অবস্থায় গাংনী পৌরসভাকে “বি” গ্রেডে রুপান্তর করেছি। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে “এ” গ্রেডের পৌরসভা উপহার দেবো গাংনী পৌরবাসীকে।

গত ৫ বছর ধরে মেয়র থাকা আশরাফুল ইসলাম এবারও চেয়েছিলেন নৌকার মনোনয়ন। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পাননি। তাই সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারও নির্বাচন করছেন। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনিও আছেন বেশ শক্ত অবস্থানে। যদিও বেশ কিছু বির্তকিত কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনামও হয়েছেন তিনি।

একটি মামলায় আশরাফুল ইসলামের ১০ বছরের সাজাও হয়েছিল, সেটি নিয়ে প্রার্থীতা থাকবে কিনা এটা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত ছিলেন তিনি। তবে সব কিছু কাটিয়ে পুনরায় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছর ধরে জনগণের মনে বিশ^স্ততার জায়গা করে নিয়েছি। আমি আশা করি আসন্ন নির্বাচনে পুনরায় জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবে।

সুষ্টু ভোট হবে কিনা এমন শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, ভোটের আগেই বিভিন্ন মামলা হামলা দিয়ে আমাদের কোনঠাসা করে রাখা হয়। ভোটের দিন আমাদের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাঁধা দেওয়া হয়। আমরা বিগত নির্বাচনে এগুলো দেখেছি। যদি প্রশাসন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর যদি সুষ্টু ভোট হয় তবে গাংনী পৌর নির্বাচনে ধানের শীষের জয় হবে।

শতভাগ সুষ্টু ও উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট হবে বলে রিটার্নিং অফিসার আহম্মেদ আলী জানান, এবার ইভিএম’এ ভোট গ্রহণ করা হবে। আমাদের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

মেপ্র/আরপি