গুজবের গণমাধ্যম এবং মেহেরপুর প্রতিদিন

গুজবের গণমাধ্যম এবং মেহেরপুর প্রতিদিন

কুকুরে মানুষ কামড়েছে এটা নয় বরং মানুষে কুকুর কামড়েছে সেটাই খবর। এই চটুলকথনের বাস্তবতা নিঃসন্দেহে পাঠক আকর্ষণের উপযোগী হতে পারে, কাটতি বাড়তে পারে। যেমনটি টেবলয়েড পত্রিকার ক্ষেত্রে হয়। যার একমাত্র উপজীব্য রিউমার। গুজব ছড়িয়ে যেমন সিনেমা সেলিব্রিটিদের ধরাশায়ী করা যায়, আবার কাওকে বানিয় দেয়া যায় রাতারাতি বিখ্যাত। শুধু সিনেমা কেন রাজনীতি, ধর্মনীতি, অর্থনীতি সবক্ষেত্রেই এ গুজবকে পৃথিবীব্যাপী কাজে লাগানো হচ্ছে।

পল গোয়েবলস গুজবের উদাহরণ হয়ে আছেন ইতিহাসে। কী দারুণ প্রতাপে নিয়ন্ত্রণ করেছেন রাজনীতি, গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন অর্থনীতির। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গোয়েবলস গুজবকে কাজে লাগিয়েছেন মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে।

বর্তমানে চারপাশে তাকালে গোয়েবলসকে রাজনীতির মাঠে হাটতে দেখা যায়, ধর্মগুরুদের মাঝে গোয়েবলস উঁকি দেন। চারিদিকে তাকালে গোয়েবলস গোয়েবলস গোয়েবলস!

বর্তমানে দেশের গণমাধ্যম দুভাগে বিভক্ত। একভাগে মিথ্যাকে উপস্থাপন করা হয় সত্যের মতো করে; আর একভাগে সত্যকে ডুবিয়ে দেওয়া হয় মিথ্যার অতলান্তে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম রাজনীতি ও রাজনীতিকদের একধরণের চরিত্র প্রচার করে চলেছে, যে কারণে ভয়ানক ডিক্টেটরও এখানে ভীষণ ডেমোক্রেটিক। অথচ গণমাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে চতুর্থ স্তম্ভ। ঘুষ, দূর্নীতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের বিস্তার সামাজিকীকরণের পর্যায়ে চলে গেছে। সহজভাবে বলতে গেলে গা সওয়া হয়ে গেছে। অটোরিকশা চালক, লাউ বিক্রেতা যে যার জায়গা থেকে সুবিধামতো অনিয়ম করে চলেছে। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কণ্টকিত করে তুলবে।

আপাতদৃষ্টিতে উদ্ধৃত কুকুর কামড়ানোর দৃষ্টান্তের প্রমূল্য রয়েছে । বর্তমানে দুশো টাকা ঘুষ, চারশত টাকার জোচ্চুরি কিংবা হাঁস চাষের সফলতার খবর কোনো খবর নয়। বরং সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ার পেছনে কোন দানবীয় শক্তি দায়ী তার অনুসন্ধান করা এবং বিশ্লেষণী প্রতিবেদন হাজির করা। গণমাধ্যমের থাকতে হয় সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ আর নির্মোহ বিশ্লেষণের ক্ষমতা ।

অনেক কিছুর ওপর থেকেই সাধারণ মানুষের নির্ভরতা চলে গেছে, একমাত্র গুটিকয়েক গণমাধ্যমের উপর খানিকটা আস্থা বেঁচে আছে এখনো। তাদের মধ্যে মেহেরপুর প্রতিদিন অন্যতম।

মেহেরপুর প্রতিদিন তার বস্তুনিষ্ঠতার জন্যে ইতোমধ্যে মামলা হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সফলতার দৃষ্টান্ত ও কম নয়, তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে মহামান্য আদালত মামলা করেন, যার ফলে ভুক্তভোগীরা তাদের ন্যয্যতা ফিরে পান। এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র কন্ঠস্বর মেহেরপুর প্রতিদিন। বহুল প্রচারিত এই পত্রিকা এভাবেই সুষমসহযোগীতা দিয়ে মানুষের পাশে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষক ও কবি।