গো-খাদ্য বিক্রয় করে চলে সংসার

মুজিবনগর উপজেলার প্রায় প্রত্যেক পরিবার গরু-ছাগল পালন করে। পরিবারের দুধের চাহিদা পূরণ করতে বা শখের বসে গাভী গরু পালন করে বেশি। বিভিন্ন চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা, গরুকে চারণ ভূমিতে চরানোর সময় না থাকায় বাড়িতে রেখেই তাদের লালন পালন করে।
এ এলাকায় গরুকে মূলত ধানের বিচালি, ঘাস, খৈল, ভূসি ইত্যাদি খাওয়ানো হয়ে থাকে। তবে বিচালি ও নেপিয়ার জাতের ঘাস বেশি খাওয়ানো হয় গরুকে। পাশাপাশি প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই ছাগল পালনেও নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়।

দিনদিন ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া ও লাভ জনক হওয়ায় কিছু মানুষ গোখাদ্য- ঘাস বিক্রয় পেশাকে বেছে নেয়। এখন তাদের প্রধান পেশা গো-খাদ্য বিক্রয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বা মোড়ে গড়ে উঠেছে ঘাসের বাজার।

প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে মুজিবনগর উপজেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার নেপিয়ার সহ অন্যান্য জাতের ঘাস বিক্রয় হয়।
এই গো-খাদ্য বিক্রয়ের উপর ভিত্তি করে উপজেলার সব থেকে বড় বাজার কেদারগঞ্জ বাজারের উত্তর পার্শ্বে মুজিবনগর মেহেরপুর প্রধান সড়কের পাশে ছোট পরিসরে গড়ে উঠেছে গো-খাদ্যের বাজার যাকে এলাকার মানুষ ঘাস মার্কেট বলে ডাকে। এখানে ১০ থেকে ১৫ জন গো-খাদ্য বিক্রেতা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ঘাস বিক্রয় করে।

কেদারগঞ্জ বাজারের গো-খাদ্য বিক্রেতা মানিকনগর গ্রামের মৃত এলেমান মন্ডলের ছেলে ইয়াছিন আলী (৬৫) দীর্ঘ ৮ বছর ধরে গো-খাদ্য ঘাস বিক্রয় করছেন। তিনি জানান, প্রথম অবস্থায় ১০ কাঠা পরিমাণ জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করে ভ্যান গাড়িতে করে গ্রামে গ্রামে বিক্রয় করতাম। তখন ১০/২৫ আটি বিক্রয় হত। দিনদিন ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি ৫ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছেন। এখন প্রতিদিন তিনি ৫ টাকা দরে প্রায় ৬শত আটি ঘাস বিক্রয় করে। খরচ বাদ দিয়ে ৬/৭শত টাকা লাভ থাকে। এটাই তার এখন প্রধান পেশা, এতেই চলে তার সংসার।

গোখাদ্য বিক্রেতা শিবপুর গ্রামের আব্দুর রহমান গাইন(৫৫) জানান, তিনিও প্রায় ৬ বছর যাবত ঘাস বিক্রয় করছেন। তিনি ৩ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছেন। প্রতিদিন তিনি কেদারগঞ্জ বাজারে ঘাস বিক্রয় করেন। গড়ে প্রতিদিন তার ৪/৫ শত টাকা লাভ হয়।

ঘাস বিক্রেতা রামনগর গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, আগে তিনি ভ্যান চালাতেন। মাঝে মাঝে তিনি ভ্যানে করে পাটের মাথা, ঘাস, কাঁচা গমের গাছ নিয়ে বিক্রি করতেন। লাভ জনক হওয়ায় আস্তে আস্তে তিনি এটা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি নিজের ১ বিঘা এবং ২ বিঘা জমি বিঘা প্রতি বছরে ১৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ঘাসের চাষ করেছেন। প্রতিদিন সকালে জমি থেকে ঘাস কেটে ঘাস মার্কেটে এনে সারা দিন বিক্রয় করেন। এতে তার খরচ বাদ দিয়ে দিন ৫/৬শত টাকা লাভ থাকে, এতেই তার সংসার চলে যায়।

এভাবেই গো-খাদ্য বিক্রয় করে চলে উপজেলার অর্ধশত পরিবার।