গ্রাম গঞ্জে বাউল ও লোকগানের কদর বাড়ছে

এক সময় ছিল পাড়া গায়ের সহজ সরল নারী পুরুষ রাত অবধি জেগে গ্রামীন যাত্রা, লোকজপালা , রহিম রুপবান , বেহুলা ও মনোষার পালা জারী নসিমন সুন্দরী , বাউল কির্তন ভাব বিচ্ছেদি গান শুনতেন। গ্রামের হাটমোড়ে , বাঁশতলায় , বটতলায় ,পুজা মন্দিরের সামনে, ঠাকুরতলায় মন্চ করে আবার সামিয়ানা টাঙিয়ে হ্যাচাক লাইট জ্বালিয়ে এ সব লোক ঐতিহ্য গান পরিবেশন হতো। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে রাতযেগে প্রানভরে উপভোগ করতো।

৯০ দশকের পর বিপদগামী কতিপয় কথিত শিল্পী নাম ধারিরা রাতারাতি তারকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অশ্লীল কিছু নাচ ও গান বাজারে ছাড়ার পর অধিকাংশ গান প্রেমি মানুষ ও ভক্তগন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সাথে আবার আকাশ সংস্কৃতির কারনে বিদেশী কিছু উচ্চ শব্দের ডিজে গান নামে বাজারে আসায় ছোট ছোট ও উঠতি বয়সি ছেলে মেয়েরা ডিজে গান ও বাজনার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। বয়সের কারণে তারাও আকৃষ্ট হতে থাকে। বিদেশি উচ্চ শব্দের বাজনা সম্পপ্ন ডিজে নামক গান ও অশ্লীল গানের প্রতি অনেকেই ঝুকে পড়ে। ফলে এ দেশের লোকগাথা, লোকঐতিহ্য ও লোক ও বাউলগানের প্রতি উঠতি বয়সিদের আগ্রহ কমতে থাকে। তারা অবশ্য জানেইনা বাঙালি জাতির ঐতিহ লোক ও বাউলগানের কত গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে। মাঝ পথে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল।

গতকাল শনিবার সকাল এগারোটার দিকে এমন একটি গ্রামীন লোক পালা পীরেরগান অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙা জেলার দামুডহুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণচাদ পুর গ্রামের সাজাহান মন্ডলের বাশতলায়। যেখানে মুখে মাস্ক পরা শত শত মানুষের সমাগম ঘটে । দেশে করোনার মধ্যে যখন মানুষ জড়োষড়ো ঠিক সেই সময়ে মানুষের মনে কিছুটা হলেও সাহস ও চাঙ্গা করতে এ ধরনের একটি আয়োজন বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়ে ক্লান্তি দূর করেছে বলে উপস্থিত শ্রোতারা জানালেন।

বাউল পরিষদের সদস্য, পালাকার মহিদুল ইসলাম জানান বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রাম গন্জে ফের লোকসংস্কৃতির প্রচার হতে যাচ্ছে। আমরা আবারো মন প্রাণ খুলে গাইতে পারবো দেশজ লোকজ পালা জারিসারী ভাটিয়ালি বাউল ও বিচ্ছেদ।
তিনি জানান, তরুণ ছেলেরা অবিকল মেয়ে সাজিয়ে আমরা এ সব লোকজ পালা করে থাকি, যে সব পালার গ্রাম গন্জে খুবই কদর রয়েছে ,কদর বাড়ছে। চুয়াডাঙা জেলার এক মাত্র লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন বাউল পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের

লোকসংগীত শিল্পী ধীরু বাউল জানান দেশীয় লোকজ সংস্কৃতির ভান্ডার এতোটাই সমৃদ্ধ যা পরিবেশন করলেই নতুনত্ব পাওয়া যায়।বিশেষ করে বেহুলার পালা মনোষার পালা নসিমন সুন্দরী, ভাষানগান পীরেরগান গাজিরগান রহিম রুপবানের পালার প্রচুর চাহিদা ও কদর রয়েছে ।
চুয়াডাঙা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ জানান, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে লোক ও বাউলগানের ব্যপক চাহিদার জন্যই গ্রাম গন্জের মানুষ এখনো সারারাত জেগে এ সব পালা শুনে থাকে। এদেরকে সহযোগিতা করা হলে বাংলার আদি রুপ ফুটিয়ে তুলতে পারে বলে আমার বিশ্বাস ।

চুয়াডাঙা জেলা পরিষদের সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ও দামুডহুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মুনজু বলেন, বর্তমান সরকার বাঙালির আদি শিল্প ও সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে প্রতি বছর জেলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্পী সমাজকে আর্থিক সাহায্য সহযোগীতা করেছেন এখনো করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন এক মাত্র আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ছাড়া কবি শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরাই নিরাপদে তাদের চর্চা চালিয়ে যেতে পারে ।