
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ডক্টর সৈয়দ এনামুল কবির বলেন, চব্বিশ পরবর্তী সময়ে ঘুষ কল্পনা করা যাবে না। সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ খেতে চাইলে, চাকুরী না করে থালা হাতে রাস্তায় গিয়ে ভিক্ষা করুন। এবারের নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক'শ বছরের গতি পরিবর্তনের নির্বাচন। গত তিনটা নির্বাচনে এদেশের তরুণ যুবক ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সাথে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সোমবার দুপুরে মেহেরপুরে নবযোগদানকৃত জেলা প্রশাসক ডক্টর সৈয়দ এনামুল কবির গাংনী উপজেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
গাংনী উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথি ডক্টর সৈয়দ এনামুল কবির আরও বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে জোর জবরদস্তি, কারুচুপি, বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষকে মিসগাইড করে, বাঁধা বা শক্তি প্রয়োগ করতে চাইলে সেটা রুখে দেওয়া হবে। সেই সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের দায়িত্বে আমরা যারা থাকবো তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করার জন্য।
মিথ্যা গুজব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ডিসি সৈয়দ এনামুল কবির আরও বলেন, গুজব, অপতথ্য এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে সমাজকে পিঁড়া দিচ্ছে। সমাজে তিন ধরণের তথ্য আছে, মিস ইনফোরমেশন, ডিসইনফোরমেশন ও ব্যাড ইনফোরমেশন। এই তিনটা তথ্যের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অপতথ্য বা গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। এটার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ক্ষতি করা। ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্যাড ইনফোরমেশন হলো সঠিক তথ্য থাকলেও উদ্দেশ্য ক্ষতি করা। এই তিনটা তথ্যই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই তথ্য যাচাই-বাছাই না করা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো তথ্য শেয়ার না দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইলেকশন কমিশন এই কাজগুলো বা ইনফরমেশনগুলো ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। যারা এসব মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিষয়ে সঠিক এবং সত্য তথ্যটা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া গাংনীর বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাল্যবিবাহ, মাদক নিয়ে কাজ করার জন্য সমাজের সকলের সহযোগীতা চান তিনি। তিনি বলেন, মেহেরপুর জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। জেলার কৃষি জমিগুলো তিন ফসলি হওয়ায়, কৃষকরা তাদের জমিতে মাত্রাতিরিক্তি সার প্রয়োগ ও সিস্টেমের সমস্যার কারণে সার সংকট হয়েছে বলে মনে করছেন।
জেলার কৃষক ও কৃষির কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত ২ হাজার মেট্রিকটন সারের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ৪’শ মেট্রিকটন টিএসপি ও ৪’শ মেট্রিকটন ডিএপি সার অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে।
মাদকের হটস্পটগুলোতে অভিযান চালানো শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, মাদক কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না। মাদক নিমুর্লে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের হটস্পট চিহ্নিত করে যারা যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মিডিয়া কর্মীদের একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা কিছুদিনের জন্য আপনাদের এলাকায় সেবা দিতে আসেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এলাকার কাজগুলো আদায় করে নিতে হবে। শুধু নাগরিক সেবা নিলেই হবেনা। সাথে সাথে একজন সুনাগরিকের দায়িত্বও পালন করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, সড়ক নিরাপত্তা কমিটির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল ধরতে হবে। এসব অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়িগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের হস্তক্ষেপ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।
এছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও উপজেলা প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের নিদের্শ দেন তিনি। যে কোনো সমস্যা সমাধানে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
বর্তমান সময়ে কৃষকের সার সংকট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, মাদক ও বাল্য বিবাহসহ গাংনী উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নকল্পে সরকারের বরাদ্দের সুষম বন্টনের অনুরোধ জানান গাংনীর সুধিজনেরা।
এসময় বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর-২ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক সামসুল আলম সোনা, গাংনী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলফাজ উদ্দীন কালু, উপজেলা জামায়াতের আমীর ডাক্তার রবিউল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল আজিজ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক মুজাহিদুল ইসলাম, কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও করমদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মু, আলম হুসাইন, গাংনী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিএফএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল হেলাল, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী কানন, গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক হোসেন, মুন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন।
এসময় সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রধানগণ, এনজিও প্রতিনিধি, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জেলা প্রশাসক ডক্টর সৈয়দ এনামুল কবীর গাংনীতে পৌঁছালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।