
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে একজন প্রবাসী সাংবাদিক মেহেরপুর-কুষ্টিয়া এলাকার চরমপন্থি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে জুমার নামাজ শেষে বিজয়নগর কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচার চালানোর প্রস্তুতিকালে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছিলেন, হাদিকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল। পরে তাকে সিপিআর দিতে হয়। তার মাথার ভেতরে গুলি থাকার পাশাপাশি কানের আশেপাশেও গুলির আঘাত রয়েছে।
হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন আল-জাজিরার সংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা গত কয়েক মাসে অন্তত ৮০ জন সুব্রত বাইনের মতো আততায়ীকে দেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর অঞ্চলের চরমপন্থি গ্রুপ এক হয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা, এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।
সায়ের আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যিনি সুব্রত বায়েনের হ্যান্ডলার ছিলেন, জামিনে থাকা পিচ্চি হেলাল ও চরমপন্থি গ্রুপ গণমুক্তি ফৌজের প্রধান মুকুল সম্প্রতি টেলিফোনে কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে।
সুব্রত বায়েন কারাগার থেকে তার মেয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কনফারেন্স করে পিচ্চি হেলাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পলাতক মুকুলের সঙ্গে কথা বলেছে। পরবর্তীতে সুব্রত বায়েনের মেয়ে সিনথিয়া বিতু নেপালে পলাতক বিডিআর মামলার পলাতক আসামি লেদার লিটন, পিচ্চি হেলাল, মুকুল, বাড্ডার বড় সাঈদ ও দিপুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়।
প্রবাসী এই সাংবাদিক বলেন, নির্বাচন বানচাল এবং দেশকে চরম অস্থিতিশীল করতে বিশেষ গোষ্ঠী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে। একতাবদ্ধ থেকে এদের মোকাবিলা করাই একমাত্র উপায়।
আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের এই স্ট্যাটাস গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে দেশের কয়েকটি মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে।
হাদির গুলিবিদ্ধ ঘটনায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুইজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালায়।
তার দাবি, ‘এই দুইজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিল। মাঝখানে কিছুদিন তাদের দেখা যায়নি। কয়েকদিন আগে তারা আবার এসে প্রচারণার কাজে যোগ দেয়।
এদিকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা জানান, তারা সব তথ্য যাচাই করে দেখছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুরে অস্ত্রধারীরা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে। তাকে উদ্ধার করে ২টা ৩৫ মিনিটে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের (ডিসি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে যতটুক জানা গেছে, দুপুরের দিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান বিন হাদিসহ তার সঙ্গে আরেকজন রিকশায় করে যাচ্ছিলেন।
তাদের রিকশা কালভার্ট রোড এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে দুজন এসে ওসমান বিন হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। বিস্তারিত ঘটনা জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য গ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা থাকলে তা উন্মোচনের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।


