চাকরি ছাড়ছেন ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টরা

বর্তমান বাস্তবতায় সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’। কিন্তু কারা অধিদপ্তরে দুটি পদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উলটা। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্ট পদ বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে।
বর্তমান বাস্তবতায় সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’। কিন্তু কারা অধিদপ্তরে দুটি পদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উলটা। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্ট পদ বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে।

এসব পদে বারবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পদগুলো পূরণ হয়নি। আর এসব পদে প্রতিবছর যতসংখ্যক লোক যোগ দিচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি চাকরি ছাড়ছেন। দেশের কারাগারগুলোয় ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টের ১৭৩টি পদ আছে। এর ১২২টিই শূন্য।

পদোন্নতি না পাওয়া এবং বদলিসহ নানা ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা যায়, কারা অধিদপ্তরে ১০৬টি ডিপ্লোমা নার্সের পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৩৫ জন। ফার্মাসিস্টের পদ আছে ৬৭টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৪৫ জন।

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক চিঠি অনুযায়ী কারাগারগুলোয় ৫৩টি ডিপ্লোমা নার্স, ১২টি মহিলা ডিপ্লোমা নার্স এবং ৩৩টি ফার্মাসিস্টের পদ খালি ছিল। ওই পদগুলো এখনো পূরণ হয়নি।

এদিকে কারা অভ্যন্তরে বন্দিদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সহকারী সার্জনদের বেশির ভাগ কারা এলাকায় অবস্থান করেন না। থাকেন কারা এলাকার বাইরে। অথচ জেলকোড অনুযায়ী কারা অভ্যন্তরে অবস্থান করে বন্দিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সহকারী সার্জনদের দায়িত্ব।

কারণ বন্দিরা যে কোনো সময়ই অসুস্থ হতে পারেন। তাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার বেশির ভাগই রাতের বেলায়। সহকারী সার্জনদের অনুপস্থিতিতে ওই সময় অসুস্থ বন্দিদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেন ডিপ্লোমা নার্স বা ফার্মাসিস্টরা।

জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ডিপ্লোমা নার্স হামিদুর রহমানের কক্সবাজারে বদলির আদেশ হয়েছে দুই বছর আগে। ওই বদলির আদেশ বাতিল বা স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু এখনো তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

কাশিমপুর-৩ হাই সিকিউরিটি কারাগারে কর্মরত ডিপ্লোমা নার্স আবুল বাসারের তিনি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে গত জুনে। স্বাভাবিকভাবে তার অন্যত্র বদলির আদেশ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তিনি সেখানে কর্মরত আছেন।

সূত্র আরও জানায়, জেলকোড অনুযায়ী অনেক বিষয়ের সঙ্গে সহকারী সার্জনদের সংশ্লিষ্টতা আছে। এ কারণে তাদের প্রতি সহনশীল থাকেন জেলার বা জেল সুপাররা। বন্দিদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়ে তারাই রিপোর্ট দেন। বন্দিদের জন্য সরবরাহ করা খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টিমান থাকে না। এমনকি তাদের খাবারে মাছ, মাংস বা অন্যান্য উপদান যে পরিমাণে থাকার কথা, তা থাকে না।

এক্ষেত্রে সহকারী সার্জনরা যেন নেতিবাচক প্রতিবেদন না দেন, সেজন্য জেলার বা জেল সুপাররা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন। যেহেতু ডিপ্লোমা নার্স বা ফার্মাসিস্টরা কোনো ধরনের রিপোর্ট দেওয়ার সঙ্গে জড়িত না। তাই কর্মক্ষেত্রে তারা অনেকটা বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার।

ডিপ্লোমা নার্সরা দশম গ্রেডে ও ফার্মাসিস্টরা ১১তম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। অপরদিকে ডেপুটি জেলাররা ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ পেতেন। বর্তমানে ১১তম গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

ফার্মাসিস্ট ও ডেপুটি জেলাররা একই গ্রেডে যোগ দিলেও ডেপুটি জেলাররা পদোন্নতি পেয়ে জেল সুপার হয়ে যান। কিন্তু ডিপ্লোমা নার্স বা ফার্মাসিস্টদের পদোন্নতি হয় না। এমন প্রেক্ষাপটে তারা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। গত বছরও চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন ১৬ জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডিপ্লোমা নার্স যুগান্তরকে বলেন, ‘অমরা সব সময় কারাগারের ভেতরে থেকে দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু আমাদের কোনো ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয় না। অথচ ডেপুটি জেলাররা এ ভাতা পান। ঝুঁকি ভাতা না পাওয়া, পদোন্নতিবঞ্চিত করা, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং জেল কর্তৃপক্ষের বিমাতাসুলভ আচরণসহ নানা কারণে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টরা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কারাগারগুলোয় ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টের যেসব পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলো পূরণের চেষ্টা করছি। নিয়ম অনুযায়ী একটি কারাগারে ফার্মাস্টি ও ডিপ্লোমা নার্স দুটিই থাকার কথা।

জনবল কম থাকায় আমরা সব কারাগারে ফার্মাসিস্ট অথবা ডিপ্লোমা নার্স যে কোনো একটি রাখছি। কোনো কারাগার একেবারে খালি রাখছি না। কোনো কারাগারে দুটিই (ফার্মাস্টি ও নার্স) আছে। তিনি আরও বলেন, দেশে কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব সহকারী সার্জন মাত্র পাঁচজন।

ওই পাঁচজন সার্বক্ষণিক কারা অভ্যন্তরেই থাকেন। বাকি কারগারগুলোয় দায়িত্ব পালন করেন সরকারের অন্য দপ্তর থেকে আসা সহকারী সার্জনরা। তাই অফিস টাইম শেষে তারা চলে যান। এ কারণে সরকারি ছুটির দিন বা অফিস টাইমের বাইরে তাদের পাওয়া যায় না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিপ্লোমা নার্স হামিদুর রহমানকে কক্সবাজারে বদলি করার পর তিনি তার সন্তানের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় আরও কিছুদিন বর্তমান কর্মস্থলে থাকার আবেদন জানিয়েছলেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মাসছয়েক সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অনুমতির মেয়াদ অনেক আগেই শেষে হয়ে গেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বদলি পদায়নে আভ্যন্তরীণ নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনেও পদোন্নতি না হওয়াসহ নানা কারণে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টরা চাকরি ছাড়ছেন। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নলেজে আছে। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।