চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলার রায় আজ, সেদিন কী ঘটেছিল বরগুনায়?

চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা হবে আজ বুধবার। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।

প্রাপ্তবয়স্ক এই আসামিদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেন।

এছাড়া এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক অন্য ১৪ আসামির বিরুদ্ধেও সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বরগুনা নারী ও শিশু আদালতে এই সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়। যেকোনও দিন রায়ের তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন আদালত।
সেদিন কী ঘটেছিল বরগুনায়?

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ২৬ জুন। ওই দিন সকালটি আর ১০টি সকালের মতোই শুরু হয়েছিল রিফাত শরীফের। কিন্তু সেই সকালটি হয় তার জীবনের শেষ সকাল। বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে হঠাৎ কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনীর হামলার শিকার হন রিফাত। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

কিন্তু বর্বরচিত এই হত্যাকাণ্ড সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

যেভাবে খুন হন রিফাত

বুধবার, ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজে যান রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। পরে স্ত্রীকে তাকে আনতে কলেজে তিনি। মিন্নিকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন রিফাত। কলেজের গেটে ওঁৎ পেতে থাকা কিছু সন্ত্রাসী রিফাতকে কলেজ গেট থেকে টেনে নিয়ে নয়ন বন্ড ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে নিয়ে যায়। তারা রিফাতের ওপর আক্রমণ করে। হঠাৎ নয়ন বন্ড দৌঁড়ে গিয়ে একটি রামদা নিয়ে আসে। এরপর সেটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে রিফাতকে। এসময় মিন্নি অনেক চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনি হামলাকারীদের। পরে একটি রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হয় রিফাতকে। দূর থেকে এই দৃশ্য কে বা কারা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। নয়নের কোপানোর দৃশ্য দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন।

কে এই নয়ন বন্ড?

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের তথ্যমতে, পৌর শহরের বিকেবি রোডের শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকির ছেলে সাব্বির হোসেন নয়ন। তিনি ছিলেন মাদকাসক্ত। শুধু তাই নয়, রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ছিলেন অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। পরে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এই নয়নের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ‘কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত’ বনে যাওয়ার মতো ছিঁচকে চুরি আর ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হয় বরগুনার সাব্বির হোসেন নয়ন।

দলীয় কোনও পদ-পদবি না থাকলেও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে ছিঁচকে চোর থেকে বরগুনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয় সে। মাদক বিক্রির পাশাপাশি পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার নিজ বাসায় মাদকসেবীদের মাদক সেবনের সুযোগও করে দিত নয়ন। সুবিধা পাওয়ায় মাদকসেবীরাও ভিড়ত তার কাছে। এভাবে ধীরে ধীরে বরগুনা শহরের মাদকের ডন বনে যায় সে। নিজের বাসা মাদকের আখড়ায় পরিণত করে নয়ন।

সূত্র- বিডি প্রতিদিন