চা-বিক্রিই ভরসা অবুঝ ৪ ভাই বোনের

বাবা মাকে হারিয়ে অথয় সাগরে ভাসছে মেহেরপুরের গাংনীর কসবা গ্রামের ৪ অবুঝ শিশু। মায়ের মৃত্যু’র পর অবুঝ শিশুদের ছেড়ে তাদের বাবা নতুন বিয়ে করে সংসার পেতেছে অন্যত্র।

বাবা মাকে ছাড়াই বৃদ্ধ দাদার ঘরে অনাহারে অর্ধহারে অবহেলায় মানবেতর জীবন যাপন করছে ঐ শিশুরা। ছোট তিন ভাই বোনের আহার ও পড়াশুনার খরচ জোগাতে ভাঙ্গাচোরা চায়ের দোকান দিয়েছে শিশু আশিক (১২)।

শিশু আশিক জানায়, মুস্তাকিম (১০), কুলসুম (৮) ও রিয়াজ (৬) নামের তিন ভাই বোন রয়েছে মায়ের মৃত্যু’র পর বাবা অন্যত্র বিয়ে করে তাদের ছেড়ে চলে গেছে। বৃদ্ধ দাদা দাদীর কাছে থাকে সে সহ তার ভাই বোনেরা। বৃদ্ধ দাদার অভাবের সংসার ঠিকমত চলেনা দু বেলা দুমুঠো ভাতও জোটেনা।

পরে বাড়ির সাথে একটি চায়ের দোকান চালিয়ে ভাই বোনদের পড়াশুনা ও দু বেলা আহার জোটানোর চেষ্টা করছি। আশিক আরো জানান, তারা কুড়ে ঘরে থাকেন পানিতে ভিজে অনেক রাত কাটাতে হয়েছে। তাই একটি ও দোকান থাকার জন্য একটি ঘর হলেই চার ভাই বোন মিলে কিছুটা শান্তির সাথে থাকতে পারবো।

আশিকের দাদী সালমা খাতুন জানান, ৪ জন শিশুকে নিয়ে তিনি মহা বিপাকে পড়েছেন। অভাব অনটনের সংসারে তাদের ঠিকমত খেতে দিতে পারিনা। শিশুরা বিভিন্ন সময়ে মায়ের জন্য কান্না করে। মা আসছে আসবে বলে অনেক সময় তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিই। এভাবে চলে তাদের জীবন সংগ্রাম। সরকারী ভাবে সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।

শিশু রিয়াজ জানায় সকালে সে নুন (লবন) দিয়ে পানতা ভাত খাইছে। সে বলে আমাদের মা নেই তাই কেউ ভালোবাসেনা ঠিকমত খেতেও দেয়না।

স্থানীয়রা জানায়, শিশুদের মা মনোয়ারা খাতুনের মৃত্যু’র পর তাদের বাবা ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা গ্রামের রাশিদুল ইসলাম পুনরায় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করলেও ৪ শিশুর খোজ খবর নেয়না।

শিশুদের দাদা বৃদ্ধ নালান হোসেন অনেক কষ্ট করে কোন রকম দু বেলা দু মুটো ভাত কাপড়ের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করে। কিন্তু বয়সের ভারে নালান হোসেন ঠিকমত কোন কাজ করতেও পারেন না। বৃদ্ধ দাদার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সব স্বপ্ন শেষ করে সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নিয়েছে কিশোর আশিক।

আশিকের দাদা লালন জানান, কি বলবো বাবা ৪ শিশুকে নিয়ে কষ্টের সংসার চলছে। বয়স হয়েছে ঠিকমত চলাচল করতে পারিনী। কি করে অবুঝ শিশুদের মুখে ভাত তুলে দেবো সেই ভাবনায় থাকতে হয়। সরকারী ভাবে যদি মাসে ৩০ কেজি চাউল,দোকান সংস্কার করে কিছু মালামাল উঠানো যেত তাহলে হইতো কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হতো।

ধানখোলা ইউপি সদস্য কসবা গ্রামের বাসিন্দা নিলু জানান, শিশুদের দেয়ার মত সরকারী ভাবে বরাদ্দ কিছু নেই। তবে তাদেও সহায়তার জন্য সকলেল এগিয়ে আসা উচিৎ।

ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান,পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সহায়তা করার আশ্বাস দেন তিনি। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, শিশুদের খোঁজ খবর নিয়ে সহায়তা করা হবে।

আল-আমীন, গাংনী