চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের বিরুদ্ধে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের বিরুদ্ধে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শেখ রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধর ও অর্থবাণিজ্যের গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তীত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। কমিটি লিখিত স্বাক্ষতকার গ্রহণ করেছেন অনেকের। মিলতে শুরু করেছে ঘটনার সত্যতা। প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত মধ্যস্থতাকারি সাইফুল ইসলামকে পেলে পরিষ্কার হবে ৯৫ হাজার টাকার ভাগ কে কত নিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শেখ রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে পিকাপভ্যানসহ ঢাকা ধামরাইয়ের ৪ জনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় দেনদরবার করে নেহালপুর গ্রামের সাইফুলের মাধ্যস্থতায় আটককৃতদের ছেড়ে দেবার গুরুত্বর অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ পিপিএমকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

গতকাল বুধবার ২৫ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন এবং অনেকের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে আছেন সোরাফ হোসেন, বোন রেহেনা ওরফে জয়নব, রেহেনার মেয়ে রিক্তা খাতুন।

লিখত বক্তব্যে প্রত্যেকেই জানান, ঢাকার মেহমানরা পিকাপ নিয়ে গত শুক্রবার ৪ জন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই রকিবুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আটক করার সময় গরুচোর অপবাদ দিয়ে মারধরও করে। তাদেরকে ছাড়াতে ডিঙ্গেদহ বাজারের ২টি বিকাশের দোকান থেকে ১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যস্থতা এবং এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম।

তদন্তকমিটর নিকট রিক্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আত্নীয়কে ছাড়াতে আমি ওই দারোগার পা পর্যন্ত চেপে ধরি এবং ধমকও খায়। এতকিছু করেছি কারণ ঢাকার আত্নীয়দের নেহালপুরে আমাদের বাড়িতে আমিই পাঠিয়েছি। আর আমাদের বাড়িতে এসে তারা বিপদে পড়েছে এর জন্য আমিই দায়ি।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, এরি মধ্যে হতদরিদ্র রিক্তার মা একটি গরু ৭০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে সেই টাকা ক্ষতিপুরণ হিসাবে ঢাকাতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান কোন মন্তব্য না করলেও তদন্ত কমিটির সামনে কয়েকটি সত্যতা মিলেছে। যার মধ্যে কোন সুনিদৃষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ৪ জনকে আটক করা। মারধর করা। কোন উর্দ্ধতম কর্মকর্তাকে না জানিয়ে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পে আটকিয়ে রাখা। বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা উত্তলন করা। এখন সাইফুলকে পেলেই ৯৫ হাজার টাকা কি ভাবে কোন ক্ষাতে খরচ হয়েছে তা পরিষ্কার হবে।

ঢাকা ধামরাইয়ের আব্দুর রহমান বলেন, আমার শিশু ছেলেকে পুলিশ ধরেছে এবং মারপিট করেছে এমন সংবাদ পেয়ে হিজলগাড়ীতে ছুটে আসি। ডিঙ্গেদহ বাজারে পরিবহণ থেকে নামার সাথে সাথে গতিরোধ করে সাইফুল। সে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাতে থাকলে আমি ও আমার স্ত্রী সন্তানের কথা ভেয়ে আরও ভয় পেয়ে যায়। তাই সাইফুলের কথায় রাজি হয়ে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা উত্তলন করি। যার মধ্য থেকে ৫ হাজার টাকা আমাকে দেয়। বাকি ৯৫ হাজার টাকা সে নিয়ে আমাদেরকে হিজলগাড়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। একপর্যায় গত শনিবার বিকাল ৪ টার দিকে আমার ছেলেসহ বাকিদের পুলিশ ছেড়ে দেয়। এদের মধ্যে আমার শিশু ছেলে ও এক ভাইকে পুলিশ মারধর করেছে। তার ছবি তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছি।

তদন্ত কমিটির সামনে সোরাফ হোসেন আরও জানায়, আটক এবং টাকা পয়সা লেনদেনর বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে ওই দারোগা গত রোববার বেলা ১১টার দিকে আমি একটি মাঠে কাজ করছিলাম সেখানে আসে এবং আমাকে ধমক দিয়ে ধরে নেবার চেষ্টা করে ও শাসাতে থাকে। মাঠের লোকজন এর প্রতিবাদ করলে দারোগা চলে যায়।