চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা ক্ষেতে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ দমনে প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ভুট্টা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দানাদার শস্য। কৃষকদের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। ভুট্টা চাষে কৃষকেরা অন্য যেকোন ফসল অপেক্ষা বেশি অর্থ আয়ের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। ভুট্টা ক্ষেতে ক্ষতিকর ফল আর্মিওয়ার্ম থেকে চাষীদের নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার হোটেল শহীদ প্যালেসে চারদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। কৃষি স্প্রসারণ অধিদফতরের প্রায় ৫৫ জন নারী কর্মকর্তা দুটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ কর্মশালাতে অংশ নিচ্ছেন।

রবিবার সকালে এ প্রশিক্ষনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীটি মূলত কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত নারী কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। যাতে তারা ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে এবং কীটনাশক এর বিষক্রিয়া ঝুঁকি হ্রাসকল্পে কৃষকদের, বিশেষ করে কৃষানীদের যেকোন রকম কৃষি পরামর্শ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

চুয়াডাঙ্গা ভুট্টা উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। এ বছর ৪৮ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। যার থেকে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে।

চুয়াডাঙ্গা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মোঃ আলী হাসানের সভাপতিত্বে প্রখ্যাত পতংগবিদ ডক্টর সৈয়দ নুরুল আলম এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং সিমিট বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষক এর সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

কৃষিবীদ পার্থ প্রতিম সাহা জানান, গবেষণা লব্ধ জ্ঞান এবং সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভুট্টা ক্ষেতে ফল আর্মিওয়ার্ম দমন করা সম্ভব। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তরা এ বিষয়ে কার্যকরী জ্ঞান অর্জন করবেন।

ফল আর্মিওয়ার্ম শনাক্তকরণ, ফিল্ড স্কাউটিং কৌশল, ফল আর্মিওয়ার্ম এর জীবন পরিক্রমা, এবং মথের সংখ্যা গনা করে করে এই আক্রমনাত্মক পোকার প্রাদুর্ভাব কীভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন সেগুলি সহ প্রশিক্ষনের নানা দিক উপস্থাপন করেন। এছাড়াও বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিভাবে ফল আর্মিওয়ার্ম এর আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সে বিষয়ে আলোকপাত করেন পতঙ্গবিদ ড. সৈয়দ নুরুল আলম।

প্রশিক্ষনার্থীরা শ্রেণীকক্ষ এ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান লাভের পাশাপাশি মাঠে গিয়ে সরাসরি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

জীবন নগর উপজেলার কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার আরো বলেন, শুধুমাত্র মহিলা কর্মকর্তাদের জন্য এই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। ফল আর্মিওয়ার্ম সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে দমন কৌশল স¤পর্কে একটি বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে পারছি। যা আমাকে মহিলা কৃষকদের আরো ভালভাবে কৃষি পরামর্শ প্রদানে সহায়তা করবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল (খামারবাড়ি)’র উপপরিচালক কৃষিবীদ মোঃ আলী হাসান তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ভুট্টা এবং গম গবেষণা কেন্দ্রের কারিগরি সহায়তায় ফল আর্মি ওয়ার্ম এর প্রাদূর্ভাব এর মাত্রা পর্যবেক্ষনের জন্য তৈরি করা এ্যাপ এর প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি আরও বলেন, ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে এমন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি সপ্রসারন অধিদপ্তরের নারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়তা করবে।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিমিট বাংলাদেশ এর খুলনা অঞ্চলের হাব কো-অর্ডিনেটর ডঃ খন্দকার শফিকুল ইসলাম এই অঞ্চলে সিমিট এর চলমান বিভিন্ন কর্মসূচী এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে সরকারী এবং বেসরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গৃহীত নানা রকম প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং শিক্ষা সরঞ্জাম এর উপর আলোকপাত করেন। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি ২৫ নভেম্বর অবধি চলবে । এই প্রশিক্ষণের পরপরই আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে দিনাজপুরের নসিপুরে অবস্থিত র্ব্যাক লার্নিং সেন্টার এ দ্বিতীয় পর্বের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। যেখানে দেশের উত্তরাঞ্চলে কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহিলা কর্মকর্তারা অংশ গ্রহণ করবেন।

ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা ফসলের জন্য একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পোকা। এটি মূলত আমেরিকা মহাদেশের পোকা হলেও ২০১৮ সালের শেষদিকে বাংলাদেশের প্রথম এই পোকার আক্রমণ চিহ্নিত করা। ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা চাষিদের আয় এবং জীবিকার জন্য একটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ । এই সমস্যাটি মোকাবেলায় ইউএসএআইডি এবং মিশিগান ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইএআরডি) ’র সহযোগীতায় ‘ফাইটিং ব্যাক এগিনেষ্ট দ্যা ফল আর্মি ওয়ার্ম ইন বাংলাদেশ ’ প্রকল্পটি ( সিএসআইএসএ) প্রকল্পের সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করে। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সহায়তা করা। এই দুটি প্রকল্পই আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (সিমিট) এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লএমআরআই) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সহযোগিতায় লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে।