ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্চিত, মোবাইল ভাংচুর

জাপান টোব্যাকো ইন্ডাষ্ট্রিজ (জেটিআই) এর উদ্যোগে চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করন সভার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং সাংবাদিকের সাথে মারমুখি আচরন করেন জাপান টোব্যাকোর কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। শুধু তাই নয়, অকথ্য ভাষায় কথা বলে সাংবাদিককে অপদস্থ করেন জেটিআই এর লোকজন। গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটার সময় গাংনী উপজেলার হিন্দা গ্রামের পশ্চিমপাড়া মাঠে এঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, জাপান টোব্যাকো ইন্ড্রাষ্ট্রির আয়োজনে এবং স্থানীয় তামাক ব্যবসায়ী সিদ্দিক ও ইলিয়াসের সহযোগীতায় হিন্দা পশ্চিমপাড়া মাঠের একটি বাঁশবাগনে স্থানীয় প্রায় শতাধিক চাষি ও ব্যবসায়ীদের একত্রিত করে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করন সভা করছিলেন। সভায় প্রণোদনা ও প্রচারণা মুলক বিভিন্ন লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করন বক্তব্য দিচ্ছিলেন কুষ্টিয়া জোনের ম্যানেজার। এসময় মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলা টিভি ও দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনের সাংবাদিক আকতারুজ্জামান ওই অনুষ্ঠানের একটি ছবি তুলতে গেলে জাপান টোব্যাকো ইন্ড্রাষ্ট্রিজ (জেটিআই) এর মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার আরিফ পিছন থেকে এসে মোবাইল ফোনে থাবা মেরে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় মোবাইল ফোনটি মাটিতে পড়ে যায়।

ফোনটি নিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধকরণ সভার ধারনকৃত ছবি ডিলিট করে দেয়। পরে কোম্পানীর আরও ৪/৫জন লোক এসে পুনরায় সাংবাদিক আকত্রাুজ্জানের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এবং বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । এসমসয় সাংবাদিকের কার্ড দেখতে চাইলে সাংবাদিক আকতারুজ্জামান তার পরিচয়পত্র দেখালেও তা ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করেন তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থান ত্যাগ করে সাংবাদিক আকতারুজ্জামান। বিষয়টি গাংনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের জানান। সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যান। অন্যান্য সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তড়িঘড়ি করে উদ্বুদ্ধ করণ সভা শেষ করে গ্রাম ত্যাগ করেন কোম্পানীর লোকজন । পরে উদ্বুদ্ধ করণ সভার সহায়তাকারি হিন্দা গ্রামের হযরতের ছেলে তামাক ব্যবসায়ী সিদ্দিক ও ঝড়ু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস অন্যান্য সাংবাদিকদের না জানাতে বলেন। জানালে দেখা নেয়ার হুমকি দিয়ে বিষয়টি চেপে যেতেন বলেন।

সংবাদ পেয়ে গাংনী প্রেসক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান এবং স্থানীয়দের বক্তব্য শোনেন। স্থানীয় তামাক ব্যবসায়ী ছিদ্দিক ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ারও চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি যা ঘটেছে তা অনাকাংিখিত বলেও দাবী করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, সাংবাদিকরা মিটিং এর ছবি তুল্লে তারা কেনো রেগে গিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন? কেনইবা ছবি তোলাতে তারা রাগান্বিত হন? তারা কি তাহলে আইন বিরোধী কোন কাজ রছিলেন ? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে।

সাংবাদিক লাঞ্চিতের ঘটনায় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন, গাংনী প্রেসক্লাব সভাপতি তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম, মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আযম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দুসহ সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্র্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দরা তিব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং এঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। সেই সাথে তবে চাষিদের সাথে তারা মাঠে বসে মিটিং করার ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা বলেন, কোম্পানীর লোকজন এমন কি করছিলেন যা সাংবাদিকরা ছবি ধারন করলে তাদের আতে ঘা লাগে। নিশ্চয় কোম্পানীর লোকজন এমন বিষয় আলোচনা হচ্ছিল যা সরকার বিরোধী কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখারও দাবী করেন। একই সাথে তামাকের প্রচার ও প্রচারণার বিষয়ে তামাক বিরোধী সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

তেঁঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য নাজমুল হক খোকন জানান, জাপান টোব্যাকো’র একটি মিটিং ছিল ,আমাকে যেতেও বলেছিল কিন্তু আমি যায়নি। আমার ওযার্ডে মিটিং বা কোন সমাবেশ করার অনুমতি নেয়নি। তবে সাংবাদিক লাঞ্চিতের ঘটনা শুনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোম্পানীর শিক্ষিত ব্যাক্তিরা সেখানে একটি চাষিদের নিয়ে সমাবেশ করছিলেন । সেখানকার ছবি ধারন করা তেমন কোন অন্যায় বা নিষেধ থাকার কথা নয়।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, জাপান টোব্যাকে কোম্পানী(জেটিআই) বিভিন্ন সময় তাদের মিটিং করে আমি লোকমুখে জানতে পারি। তবে নিয়ম হচ্ছে আমার ইউনিয়নের মধ্যে কোন মিটিং করলে পরিষদকে অবশ্যই অবগত করতে হবে। কিন্তু তারা কোনদিনও জানায়নি।

জাপান টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ (জেটিআই) এর মেহেরপুর শাখা ব্যবস্থাপক আরিফ জানান, সাংবাদিক আমাদের না বলে ছবি তুলেছিল। তাই কথা কাটাটি হয়েছে। এর বেশি কিছূ হয়নি বলে দাবী করেন তিনি।

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাপান টোব্যকো থেকে মিটিং করার কোন অনুমতি নেয়নি। সাংবাদিকের সাথে তারা যে আচরণ করেছে তা অন্যায়। লাঞ্চিত সাংবাদিক অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।