লন্ডন প্রবাসী শহিদুল ইসলাম শাহিন। বাড়ি মেহেরপুরের মল্লিক পাড়ায়। স্থানীয়ভাবে তিনি শাহিন খরা বলে পরিচিত। গত এক বছর ধরে ফেসবুক লাইভে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় আসেন এই প্রবাসী।
আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে দুর্নীতি বিরোধী বক্তব্য, কড়া সমালোচনা, আর রাজনৈতিক নেতাদের একের পর এক এক্সপোজে নিজেকে তুলে ধরেন জনতার কণ্ঠস্বর হিসেবে। তবে এবার তার বিরুদ্ধেই উঠেছে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির মত ভয়ানক অভিযোগ।
মুখে জুয়া বিরোধী, পেছনে ডলার বাণিজ্য!
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে শহিদুল ইসলামের পরিচিতি বাড়তে থাকে রাজনৈতিক লাইভ ও কড়া সমালোচনার মাধ্যমে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মেহেরপুর জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার, এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি বিশিষ্ট সাংবাদিক মনির হায়দার কেউ বাদ পড়েননি তার খিস্তিখেউড়ের তালিকা থেকে।
তবে তার প্রকৃত পরিচয় সামনে আসে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে মহৎ সামাজিক যুদ্ধের আড়ালে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, শহিদুল ইসলাম শাহিন জুয়াড়িদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করেন এবং পরে তাদের ফোন দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতে থাকেন।
সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেলে জমা পড়া স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, শহিদুল ইসলাম কারও কাছ থেকে তিন হাজার ডলার, কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার ডলার দাবি করেছেন ‘ ডলার দও অথবা জুয়া বন্ধ করবা, নইলে সেনাবাহিনী দিয়ে তুলে নেব’ এমন হুমকিও উঠে এসেছে কথোপকথনে। স্ক্রিনশট গুলি জেনুইন বলে নিশ্চিত করেছে মেহেরপুরের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট।
ছিল জনসমর্থন, এখন প্রশ্নের মুখে গ্রহণযোগ্যতা
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকায় অনেকেই শহিদুলকে সমর্থন দিতেন। তার মাধ্যমে স্থানীয় চক্রের তথ্য ফাঁস হবে, এমন প্রত্যাশাও ছিল অনেকের। কিন্তু এখন প্রমাণসহ অভিযোগ আসার পর সাধারণ মানুষ বলছে, “যাকে আমরা দেখছিলাম রক্ষক, সে-ই এখন ভক্ষক!”
দীর্ঘদিনের অভিযোগ, এবার মিলেছে প্রমাণ
শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ একদিনের নয়। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, আগে এসব বলার সাহস ছিল না। কেউ প্রমাণও রাখতে পারেননি। তিনি মূলত ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের আওয়ামী লীগ ট্যাগ দেওয়া এবং মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে আক্রমণ শুরু করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই ব্যক্তির সঙ্গে গোপন কোন সমঝোতা হয় ততক্ষণ তিনি তার আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর হঠাৎ পূর্বের পোস্ট গুলো ডিলিট করে দেন। এভাবেই চলে আসছিল কয়েক মাস। এমনকি খুলনার রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক তার বড় ভাইয়ের বন্ধু এমন দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন মহলে হুমকি প্রদানের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে এবার মেহেরপুর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জমা পড়েছে অসংখ্য স্ক্রিনশট, কললগ এবং ভয়েস রেকর্ডিং যা তাকে রক্ষা করার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে বলেই মত সংশ্লিষ্টদের।
মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা বিভাগের ওসি গোপাল কুমার কর্মকার বলেন, ‘শহিদুল ইসলাম শাহিনের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান, ব্ল্যাকমেইল এবং চাঁদাবাজির একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আমাদের দপ্তরে জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কল রেকর্ড এবং হুমকিমূলক মেসেজের স্ক্রিনশট সাইবার ক্রাইম বিভাগে জমা দিয়েছেন, যা বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এছাড়া গৃহীত ব্যবস্থা ও পদক্ষেপের বিস্তারিত অনুলিপি যথাযত কতৃপক্ষ/সংস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে, যাতে বিষয়টির সঠিক প্রতিফলন ঘটে।”
তবে এ বিষয়ে লন্ডন প্রবাসী শহিদুল ইসলাম শাহিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কে অভিযোগ দিয়েছে সেটা আগে খুঁজে বের করি। আর যে অভিযোগ দিয়েছে সে পারলে প্রমাণ করুক আমি চাঁদাবাজি করেছি। ‘