প্রায় দুই মাসের টানা বর্ষণে ডুবে গেছে মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান, কলা, মরিচ ও শীতকালীন সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে মাছের ঘেরও। এতে যেমন দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষকরা বলছেন, মাঠের পানি দ্রত না নামলে শুধু এবারের নয়, আগামী মৌসুমের ফসলও বুনতে পারবেনা কৃষকরা। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা। সেই সাথে দেখা দিতে পারে জেলার খাদ্য ঘাটতি।"দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন সরকারি সহায়তার অপেক্ষায়।
মেহেরপুর জেলার সর্ব বৃহৎ ধলার মাঠ। যতদুর দৃষ্টি যায় শুধু ফসল আর ফসল। সেই মাঠে এখন শুধুই পানি। পাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসল এখন পানওে নিচে। দুই মাসের অধিক সময় ধরে অবিরাম বর্ষণ হয়েছে।
এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের মতো গাংনী উপজেলার ধলার মাঠটিতে কোথাও হাটু পানি, কোমর পানি, আবার অনেক জায়গায় বুক পানি। এই পানি না গেলে কৃষক ফসলও তুলতে পরবেননা, আগামি মৌসুমেও ফসল বুনতেও না পারার আশংকা করছেন তারা।
মেহেরপুর জেলার সর্ববৃহত ধলার মাঠে গিয়ে স্বরেজমিনে দেখা গেছে-সবজিক্ষেতের অধিকাংশ গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাকা ধান পানির নিচে ডুবে থাকায় আগাম কেটে ফেলতে হচ্ছে কৃষকদের। আর কলাক্ষেতে পানি আরও কিছুদিন থাকলে সেটিও মারা যাবে বলে আশঙ্কা। পানি জমে থাকায় ফসল তোলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। যেখানে আগে গরু বা মহিষের গাড়িতে ফসল আনা যেত, সেখানে এখন ডিঙি নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে কৃষকদের।
সময়মতো পানি না কমলে এ অঞ্চলে তীব্র খাদ্য সংকটের শঙ্কা করছেন তারা। খাল খনন ও কাজলা নদীতে পানি প্রবাহের জন্য কালভার্ট নির্মানের মাধ্যমে পানি নিস্কাশন করে কৃষিতে সহায়তা করা এখন সময়ের দাবী।
আমন ধান চাষি ধলাগ্রামের ইয়াকুব আলী জানান, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। এখন ধান কাটা মাড়াইয়ের সময়। এমন মুহুর্তে পানিতে আমার জমির সব ধান ডুবে গেছে। বেশিদিন পানির নিচে থাকলে ওই ধান আর ঘওে তোলা যাবেনা। মাইলমারি গ্রামের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, দ্রত পানি না সরলে এবার যেমন ফসল ঘওে তুলতে পারছিনা,তেমনি আগামী ফসলও লাগাতে পারবোনা । ফলে পরিবারে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। নওপাড়ার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ধালার মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খনন করা হয়েছেছিল। কিন্তু কালভার্ট না দেয়ায় মাঠের এক দিকের পানি নিস্কাশন হয়,অন্যদিকে পানি নিস্কাশন হতে পারেনা। এছাড়া খালে পাট জাগ দেয়ার কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় দির্ঘদিন জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে পুরো মাঠ। যা অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের আবাদ নস্ট হচ্ছে।
" তবে, কৃষি বিভাগের দাবি “ বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষকদের অভিযোগ হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে থাকলেও এমন দুর্যোগে পাশে নেই কৃষি বিভাগ।
জেলার এবছর ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ও ২৬ হাজার জমতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আউশ ও আমানের আবাদ হয়ে থঅকে এই ধলার মাঠে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় জেলায় খাদ্য সংকটের আশঙকা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগ। সেই সাথে পানি নিস্কাশনের জন্য খাল খনন কিংবা কালভার্ট নিমানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপন অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।