জীবননগরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে উধাও সাবেক সেনা সদস্য

জীবননগরে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া যোগদান পত্র দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনা সদস্য শাহাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।

ঘটনা ঘটেছে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের শাখারিয়া গ্রামের মোঃ আলীহিমের ছেলে তুহিন মিয়ার সাথে। প্রায় সাড়ে ৮লক্ষ টাকা নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ভুয়া নিয়োগ পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গয়েশপুর গ্রামের মৃত দুলুর ছেলে সাবেক সেনা সদস্য শাহাবুলের বিরুদ্ধে।

তুহিন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালে সেনা সদস্য শাহাবুল আমার বাড়িতে আসে এবং আমাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকরি দিবে বলে আমার নিকট ১০লক্ষ টাকা দাবি করে। আমার পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় আমি টাকা দিতে অপারাগত জানাই।

এক পর্যায়ে আমি সাত লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন সাড়ে ৮লক্ষ দিলে আমি চাকরি দিতে পারবো। আমি নগদ টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নগদ টাকা নিবো না ব্যাংকের মাধ্যমে মের্সাস রাব্বি টের্ড্রাসের এ্যাকাউন্ট নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দিতে হবে।

আমি তিনার কথা মত ২৬ই ডিসেম্বর ২০১৯সালে ইসলামী ব্যাংক জীবননগর শাখায় এজেন্ট ব্যাংকিং যার একাউন্ট নাম্বার-২০৫০৭৭৭০১০০১৭৫০০২তে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৫ ফেব্রয়ারী ২০২০ সালে একই এ্যাকাউন্ট নাম্বারে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার জমা দেওয়া হয়।

টাকা দেওয়া শেষ হলে আমার কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা বাদেই তিনি আমাকে গত ১ মার্চ ২০২০সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে যোগদানের জন্য একটি যোগদান পত্র আমার হাতে ধরিয়ে দেয় যার স্বারক নাম্বার-০৫,০১.৭৮০০০.৪১.০০৪.২০, আমি যোগদান করার জন্য অফিসে গেলে অফিস থেকে বলে এটা ভুয়া যোগদান পত্র।
আমি বিষয়টি বললে, তিনি আমাকে ঢাকা শহরের একটি ৭তলা বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে আমার সমস্থ কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে চলে যায়।

এক পর্যায় আমি বাড়ি এসে টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমার টাকা ফেরত না দিলে আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। আমি অভিযোগ দেওয়ার পরেই তিনি আমার টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছে আমি জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি এখন আমি নিস্ব হয়ে পড়েছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহাবুল সাবেক সেনা সদস্য এবং গয়েশপুর গ্রামের মেম্বর ইসরাফিল হক ফুকুর ভাই হওয়ার ফলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকার বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে তাদের নিকট থেকে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরা অনেকে জমি, গরু, গহনা বিক্রি করে টাকা দিয়েছে কিন্তু এখন আর টাকা ফেরত দিচ্ছে না, বরং টাকা চাইলে মিথ্যা মামলা ও হামলা দিয়ে হয়রানি করছে এই প্রতারকের শাস্তি হওয়া দরকার।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু তুহিন নয় সাবেক সেনা সদস্য শাহাবুল জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের বাবলুর ছেলে ইমন।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান, বাঁকা গ্রামের শিপন এবং শাখারিয়া গ্রামের মৃত কামাল মেম্বরের ছেলে ঐতিকসহ উপজেলার বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে সে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাবেক সেনা সদস্য বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিজ গ্রাম গয়েশপুরে গড়ে তুলেছেন আলীশান বাড়ি। আর তার প্রতারণার শিকার হয়ে বেকার যুবকরা দিন কাটাচ্ছে গাছ তলায় শুয়ে।

এদিকে এই প্রতারকের শাস্তির দাবি করেছেন এলাকার স্থানীয় সুধী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

অভিযুক্ত সাবেক সেনা সদস্য শাহাবুলের সাথে কথা বলার জন্য বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকের কথা শুনে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান পরবর্তীতে মুটোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

৪নং সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, সাবেক সেনা সদস্য শাহাবুলের বিরুদ্ধে এলাকার কয়েকজন বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে এ বিষয়ে একাধীকবার বসার সিদ্ধান্ত হলেও শাহাবুল সময় দিয়ে শেষ মেষ আর বসে না।

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, সাবেক সেনা সদস্যর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া যোগদান পত্র দেওয়া হয়েছে এবং মোটা অংকের টাকা নেওয়ার একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।