
শ্রাবণের অতিবৃষ্টিতে ঝিনাইদহের ফসলি জমি ও খানা-খন্দ পানিতে ভরে যাওয়ায় সাপের কামড় নতুন এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডুতে প্রতিদিনই কয়েকজন করে সাপে কাটা রোগী আসছে হাসপাতালে। অসচেতনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সময় মতো এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে না পারায় রোগীর মৃত্যু ঘটছে। গত দুই সপ্তাহে শৈলকুপায় রেকর্ড সংখ্যক সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে এসেছে। তবে সরকারিভাবে এন্টিভেনম দেওয়া বন্ধ করায় দরিদ্র রোগীরা ওঝাঁর দিকেই ঝুকছেন বলেও মনে করছেন অনেকেই।
গত বুধবার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর মাঠপাড়ার মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪৫) সাপে কেটে মার গেছে। গত কাল শৈলকুপা উপজেহলার গাংকুল গ্রামের ঘুঘু বিশ্বাসের ছেলে তোয়াজ আলীকে সাপে কামড় দিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের নিবিড় চিকিৎসায় এন্টিভেনমের মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলে। যদি সময় মত তা না পাওয়া যেত তাহলে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এ ছাড়া গত ১২ জুলাই শৈলকুপা উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামে অপু বিশ্বাস নামে এইচএসসি শিক্ষার্থীর সাপে কেটে মৃত্যু হয়। ওঝার কাছে নিয়ে সময় ক্ষেপন করা ও হাসপাতালে দেরিতে আসার কারণেই এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
জানাগেছে, জেলা সদর হাসপাতাল ও শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামান্য পরিমাণ এন্টিভেনমের মজুদ থাকলেও বাকি গুলোতে নেই। সাপা কাটা রোগী আসলে তাদের নিজ খরচে কিনে এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
গত ১৯ জুলাই শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের কৃপালপুর গ্রামের এক নারীকে সাপে কামড়ালে তিনি সাপ ধরে নিয়েই হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছেন প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগী আসছে।
ভোক্তভোগী একজন বলেন, এন্টিভেনমের যে দাম তাতে করে দরিদ্র রোগীদের পক্ষে কেনা অনেক কষ্টসাধ্য বেপার। এমনিতেই মানুষকে সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে না এসে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া আটকানো যাচ্ছে না। তার পরে এই দামের কারণে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। সরকারিভাবে প্রত্যেকটা হাসপাতালে এন্টিভেনমের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন জানান, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন দুএকজন করে সাপে কাটা রোগী আসছে। অনেকেই এন্টিভেনমের খরচ বহন করতে পারে না। হাসপাতালে এটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামানের নিজ উদ্যোগে দেওয়া এন্টিভেনমের এখনো ৭০ ভায়েল রয়েছে যা সাত জনের শরীরে দেওয়া যাবে। চারিদিকে পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে মানুষের বাসাবাড়িতে সাপ উঠে পড়ছে। যেকারণে সাপে কাটা রোগী আসছে বেশি। বাসাবাড়িতে কার্বলিক এসিড প্রয়োগের পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
হরিণাকুুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, মাঝে মাঝেই এখানে সাপে কাটা রোগী আসছে আমরা এন্টিভেনম প্রয়োজন হলে ব্যবহার করছি এখনো ১০ভায়েল মজুত আছে এবং চাহিদা দিয়েছি শীঘ্রই কিছু পাব বলে আশা করছি। গত জুলাই মাসে ৬জনকে এন্টিভেনম দিয়েছি।
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে হাসপাতাল গুলোতে এন্টিভেনম দেওয়ার যে প্রজেক্ট ছিল সেটা গত অর্থবছর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। গত জুন মাসে আমাদের ৩০ ভায়েল এন্টিভেমন দিয়েছিল। প্রতিদিনই হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসে। ৩০ ভায়েল ৩ জনকে দেওয়া যায়। আমরা হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০ ভায়েল আরও কিনেছিলাম তা অনেক আগেই শেষ হয়েগেছে। সরকারের নির্দেশনা আছে আমরা সর্বোচ্চ ৫০ ভায়েল পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবো। এন্টিভেনমের ১০ ভায়েলের দাম ১২৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত। সরকার না দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কিনে রোগীদের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত দুই মাসের তথ্য নিয়ে জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত জুন মাসে সাপে কাটা রোগী এসেছে ২২জন এবং জুলাইমাসে এসেছে ৩৩ জন । এছাড়া হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ এবং জুলাই মাসে ছিল ১১জন এর মধ্যে হরিণাকুণ্ডুতে একজন আনার আগেই মৃত্যু বরণ করে।