ঝিনাইদহে মসজিদের জমি ইমাম ও মসজিদ কমিটির কথিত সভাপতির বিরুদ্ধে গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে গত বুধবার বিকালে এলাকার লোকজন ও মসজিদ কমিটির লোকজন মিটিং করে ইমামকে চাকরিচ্যুত ও সভাপতিকে অপসারণ করেছে।
ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের আমেরচারা বাজারে অবস্থিত বাইতুল মামুর জামে মসজিদের।
আমেরচারা বাজারের দোকান মালিক সদস্যরা জানিয়েছেন, আমেরচারা বাজারে অবস্থিত বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম ও মসজিদ কমিটির সভাপতি সদর আলী এই মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি ১৬ শতক জমি সানা উল্লাহ নামে এক প্রবাসীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে বিক্রিত জমি ক্রেতার নামে মসজিদের পক্ষে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছেন সদর আলী। মোটা টাকা ঘুষের মাধ্যমে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস বেআইনীভাবে এই রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলেও অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
মসজিদের মৌখিক কমিটির সভাপতি সদর মন্ডল দাতা হিসেবে এই জমি সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দলিলে স্বাক্ষর করেছেন(দলিল নং-১০৯৪০/২৫)। দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম(সনদ নং-৭২) এই দলিল প্রস্তুত করেন এবং সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন এই দলিল রেজিস্ট্রি করেন।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আরজান আলী জানান, সাগান্না গ্রামের মরহুম শুকুর আলীর তিন ওয়ারিশ সুফিয়া খাতুন, আলেয়া পারভীন ও শাহীনা পারভীন ৪৩ নং সাগান্না মৌজার ২৫-১৯৫৬ খতিয়ানের ২১২২ দাগের ১৬ শতক ধানী জমি মসজিদের নামে দান পত্র করে দেন ২০২৩ সালের ৪ জুলাই। এই জমি গোপনে মসজিদ কমিটির অন্য কাউকে না জানিয়ে সভাপতি সদর আলী ও ইমাম রবিউল ইসলাম মিলে গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রবাসী সানা উল্লা নামের এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের না জানিয়ে একটি রেজুলেশন তৈরি করেছেন সদর আলী ও ইমাম রবিউল ইসলাম যা মসজিদের রেজুলেশন খাতায় অন্তুর্ভুক্ত নেই। নতুন দলিলে জমির মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে এই টাকা জমা হয়নি।
জমি ক্রেতা সানা উল্লার পিতা আকবার আলী বলেন, ২০২০ সালে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি-সেক্রেটারির কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এই জমি কিনেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছিল না।
গত সেপ্টেম্বর মাসে আমার ছেলের নামে মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি সদর আলী দাতা হিসেবে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।
আকবার আলী ২০২০ সালে এই জমি কেনার কথা বললেও অনুসন্ধান করে জানাগেছে, ২০২৩ সালের ৪ জুলাই ৮৯৭০ নং দলিলে আলেয়া পারভীন, শাহীনা পারভীন ও সুফিয়া খাতুন মসজিদকে এই জমি দান করেন।
আরজান আলী জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১ জুনের পরে মসজিদের আর কোন রেজুলেশন হয়নি। কমিটির সেক্রেটারী হিসাবে রেজুলেশন খাতা তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে মৌখিক ভাবে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সভাপতি হন সদর আলী এবং আমি পূনরায় সেক্রেটারী নির্বাচিত হই। এর আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি। নতুন কমিটি গঠনের পরে কোন রেগুলেশন করা হয়নি। রেজুলেশন খাতা বের করে তিনি প্রমাণও দেখান।
সদর আলী বলেন, সমস্যা মিটে গেছে। বুধবার মিটিং হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জমি ক্রেতাকে টাকা ফেরত দেয়া হবে। কাউকে না জানিয়ে গোপনে কেন রেজিস্ট্রি করে দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অল্প কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। এই জমি অনেক আগের কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি মিলে বিক্রি করে রেখে গেছে। আমি কয়েক মাস দায়িত্ব নিয়েছি। ক্রেতা আমাদের কাছে জমি রেজিস্ট্রির দাবি তুললে কমিটির অন্য সবাই বলেছিল জমির সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু কোন রেজুলেশন করা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।
মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে কোন বক্তব্য দিবেন না বলে জানান। তার যা বক্তব্য তা মিটিংয়ে সবার সামনে বলবেন বলে জানান।
দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম ভুয়া রেজুলেশনে জমির রেজিস্ট্রির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার কাছে মসজিদের ইমাম ও সভাপতি এসে যে কাগজ পত্র দিয়েছে সেই আলোকে আমি দলিল প্রস্তুত করেছি। তবে আমিও পরে বুঝতে পেরেছি রেজুলেশনটি ভুয়া।
তবে ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন বলেছেন, একটি রেজুলেশনের ভিত্তিতে জমি রেজিস্ট্রি করেছি। এই রেজুলেশন সঠিক না ভুল সেটা আদালত প্রমাণ করবে। তবে এই দলিল রেজিস্ট্রির সাথে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগটি সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। দলিল লেখক অনিয়ম ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন করলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।