ঝিনাইদহে সমাজে উঠতে হলো জরিমানা দিয়ে

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডেফলবাড়িয়া গ্রামে ৬ মাস একঘরে থেকে মাতববরদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে সমাজে উঠতে হলো এক প্রবাসীর স্ত্রীকে। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতবরদের মাঝে ঘটেছে হামলা-পাল্টা হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই গ্রামের গাছাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানায়, ১ বছর পুর্বে ওই গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী নবাই মন্ডলের স্ত্রী দিপালী বেগম স্বামীকে রেখে একই উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাবলুকে বিয়ে করে। সেখানে আড়াই মাস সংসার করার পর বাবলু তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকে দিপালী বেগম বাবার বাড়িতে ছিল।
৬ মাস পূর্বে নবাই মন্ডল তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করে আবারো বিয়ে করে বাড়িতে আসতে বলে। দিপালী বেগম বাড়িতে এলে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিন, গ্রাম্য মাতবর আলম হোসেন, কাশেম মন্ডল, মুকাদ্দেস মন্ডল, ইসাহাক মন্ডল তাকে একঘরে রাখার নির্দেশ দেয়। সেই সাথে কেউ তার বাড়িতে গেলে ৫’শ টাকা জরিমানা করা হবে বলে আইন জারি করে। সন্তানদের নিয়ে একঘরে অবস্থায় চলছিল দিপালীর দিন।
গত বুধবার সকালে ইসাহাক মন্ডল দিপালীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য মাতবরদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন। এসময় কাশেম মন্ডল, আলম হোসেনের লোকজন ইসাহাককে লাঞ্ছিত করে।
এ নিয়ে গত বুধবার রাতে দিপালীর বাড়িতে শালিস বসায় আলম হোসেন, কাশেম মন্ডল, মুকাদ্দেস মন্ডলসহ স্থানীয় মাতবররা। একঘরে থেকে সমাজে উঠতে দিপালী বেগমকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে মাতবররা। সেই সাথে ইসাহাক দিপালীর বাড়িতে এসেছেন সেই অপরাধে তাকে ক্ষমা চাওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়।
দিপালী বেগম বলেন, আমার সমাজে উঠতে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে মাতবররা। আমি বলে কইয়ে ২০ হাজার টাকা দিছি। গত বৃহস্পতিবার সকালে আলম মাতবরের হাতে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।
এদিকে, এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই গ্রামের মাতব্বর কাশেম মোল্লার সাথে ইছাহাকের লোকজনের বাক-বিতন্ডা হয়। একই পর্যায়ে সংঘর্ষে কাশেমসহ ৪ জনকে মারধর করে আহত করা হয়।
এ ঘটনার পর রাতে কাশেম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিনের লোকজন ইছাহাকের লোকজন ওই গ্রামের কাওছার মন্ডল, মাসুদুল মন্ডল, তোতালেব মন্ডল, রেজাউল ইসলাম, তাহা মন্ডল, ইসলাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও গহনাসহ নগদ টাকা লুটপাট করে।
ইসাহাক মন্ডল বলেন, এই ঘটনার মুলে রয়েছে কলিম উদ্দিন মেম্বর। দিপালীর একঘরে করে রাখা, জরিমানা করা ও হামলা ভাংচুর করিয়েছে। গ্রাম্য মাতব্বর আলম হোসেন জরিমানার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা দিপালীকে একঘরে করে রাখিনী, আমরা ওই মহিলার সাথে কথা বলি না।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল একটি ঘটনা ঘটেছে। বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটের বিষয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।