ঝিনাইদহ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

ঝিনাইদহ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

ঝিনাইদহে তরুণ-তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক কে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িকে মারধর, মোবাইল ছিনতাই ও আটকিয়ে রেখে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব হোসেনের বিরুদ্ধে।

গত ৬ অক্টোবর এই ঘটনাটি ঘটেছে এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে বলে জানান ভুক্তভোগী রড ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান। আসাদুজ্জামান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসুন্দি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি। ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের সোহেল রানা’র কন্যা দীঘি’র সাথে ফেইসবুকের মাধ্যমে শেরপুর জেলার বাবু নামে এক তরুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ছয় মাস আগে এই সম্পর্ক চলাকালীন বাবু নানান ভাবে দীঘি’র নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয় বলে জানান, দীঘি’র বাবা সোহেল রানা। সম্পর্কের এক পর্যায়ে বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাবু ঝিনাইদহে তরুণী দীঘির বাড়ি আসতে চাই এবং গত ৫ অক্টোবর বাবু ঝিনাইদহে দীঘির বাড়িতে আসে। দীঘির বাড়িতে আসার পর দীঘির বাবা তাৎক্ষণিক বাবুর কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে বাবুর বাবা- মায়ের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা খুলে বলেন এবং তাদের ঝিনাইদহে আসতে বলেন।

বাবুর বাবা পরদিন ৬অক্টোবর শুক্রবার ঝিনাইদহে আসতে চান। সসময় বাবুর পরিবার কে ঝিনাইদহ বাসটার্মিনালে আনতে দীঘির বাবা ও তার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান কে ফোন করে সোহেল রানা তার সঙ্গে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। এসময় ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান তার দোকান বন্ধ করে সোহেল রানা’র সাথে ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল আসেন। আসাদুজ্জামান ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব হোসেন সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৪/১৫ জন আচমকা সোহেল রানা ও আসাদুজ্জামান কে প্রকাশ্যে মারধর শুরু করেন এবং তাদের কাছে থাকা মোবাইল ও আসাদুজ্জামানের কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।

ঘটনার সময় বাবুর বাবা উপস্থিত ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। ছাত্রলীগ সভাপতি সজিব আসাদুজ্জামান কে উদ্দেশ্য করে বলে তোরা ঐ ছেলেকে আটকিয়ে রেখেছিস এতো বড় সাহস। ঐ ছেলেকে নিয়ে আয় না হলে শেষ করে দেবো। পরিস্থিতি সমাধানের করার জন্য আসাদুজ্জামান ফোন ফেরত নিয়ে পোড়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মমিন কে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। মমিন ঘটনাস্থলে আসার সঙ্গে সঙ্গে মমিনকেও মারধর করা হয় বলে মমিন জানান। মারধরের এক পর্যায়ে প্রেমিক বাবুকে বাড়ি থেকে এনে এবং সজিব কে আরো ২০ হাজার টাকা দিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এছাড়া পরদিন ঝিনাইদহ সদর থানায় ছাত্রলীগ সভাপতি সজিব সহ অজ্ঞাত নামা আরো একাধিক ব্যক্তির নামে অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে পোড়াহাটি যুবলীগ নেতা মমিন বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে পোড়াহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিরন ভাইয়ের সমর্থক। হিরন ভাই এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন তাই আমি বাদী হয়নি। আর ঝামেলার জন্য সোহেল রানাকে বাদী হতে নিষেধ করেছি। যেহেতু আমরা তিন জনই ভুক্তভোগী তাই আমাদের পক্ষে আসাদুজ্জামান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা তিন জনই দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী। তিনি আরো বলেন সজিবের বাড়ি শৈলকূপা উপজেলায়। তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েও আমাদের পরিচয় দেওয়ার পরেও তার বিন্দু পরিমাণ সহানুভূতি পায়নি।

এঘটনায় আমাদের সাথে তার হিংস্র আচরণের প্রকাশ পেয়েছে। ছাত্রলীগ নেতার কাছে এমন আচরণ আশা করা যায় না। এছাড়া সজিবের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ, ঠিকাদারদের জিম্মি করে জোর করে সিডিউল দরপত্র কেনা বেচা, ঠিকাদারী, শালিস বাণিজ্যসহ দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ তার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব ঘটনার একাধিক ভিডিও অডিও ফাসঁ হওয়ার ফলে তা এখন টক অফদা টাউনে পরিনত হয়েছে। সাধারণ ছাত্র ও দলের নেতা কর্মীরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র নেতারা জানান ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই (এমপি)’র মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সজিব এধরণের কাজ কাম হর হামেসায় করতে থাকে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব হোসেন জানান, আমি চাদাঁবাজির ব্যাপারে কিছুই জানিনা, আপনাদের মাধ্যমে শুনছি থানায় অভিযোগ হয়েছে, কেন অভিযোগ করা হয়েছে তাও আমি জানিনা, পুলিশ জানালে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্ঠা করবো।