
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন নিয়ে সংশয়ও কাটেনি। তবে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্ঠা রাজনৈতিক দলের কাছে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মানুষ ধারণা করছেন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এই সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে শুরু হয়েছে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের তৎপরতা। দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ দলের কেন্দ্র ও হাইকমান্ডে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সদর আসনটির রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্ব অনেক বেশি। জেলার হেড কোয়াটার হওয়ায় এই আসনের সংসদ সদস্য জেলার রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি। মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে ভোটের মাঠ গোছাতে নেমে পড়েছেন। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ওয়ার্ডভিত্তিক জনমত গঠন ও সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির নেতারা।
দলীয় সমাবেশ, জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে নিয়ে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন। দৃশ্যমান প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঝিনাইদহের চারটি আসনে যোগ্য প্রার্থী সামনে আনতে না পারলেও ঝিনাইদহ-২ আসনে তারা একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রার্থী হিসেবে দিতে পারে। তরুণ ভোট তাদের একমাত্র ভরসা। ঝিনাইদহ শহর ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল ও জেলার অন্য ৫টি উপজেলায় এনসিপির দলীয় কর্মসূচিও তেমন একটা দেখা যায় না।
নির্বাচন কেন্দ্রীক কিছু দলের জোটবদ্ধ নির্বাচন করার সম্ভাবনার কথা শুনা যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে জামায়াতের সাথে ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য কিছু ইসলামী দলের জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে আবার বিএনপির কিছু মিত্র রয়েছে তাদেরকেউ কিছু ছিট ছেড়ে দিয়ে বিএনপি নির্বাচনী জোট করার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিবন্ধকতা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। রাজনৈতিক মহলে প্রচারণা রয়েছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ঝিনাইদহ-২ আসনে ভোটের মাঠে নেমেছেন রাশেদ খান। বিএনপির সাথে গণঅধিকার পরিষদের নির্বাচনী জোট হলে এ আসন থেকে রাশেদ খানের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। জোট না হলেও গণঅধিকার পরিষদ থেকে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এই আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর (৪টি ইউনিয়ন ব্যতীত) ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ১০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩০ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৭১ জন। এ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৭ জন। ভোট কেন্দ্র ১৯৪টি।
আসনটি ঝিনাইদহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। জেলা সদর হওয়ায় সব দলই আসনটিকে নিজেদের দখলে রাখতে চায়। এ আসনে বিগত দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় এবং জামায়াত সাংগঠনিক ভাবে শক্তি অর্জণ করায় ইসলামী মোর্চা গড়ে বিএনপির সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিগত দুটি বিতর্কিত নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন ভোটাররা। এবার তারা উৎসবমূখর ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন। ভোটাররা এবার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে মূখিয়ে রয়েছে।
ভোটের মাঠে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ। তিনি ২০১৮ সাল থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি একক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যরা হলেন সাবেক এমপি মশিউর রহমানের ছেলে, বিএনপির একটি অংশের নেতা ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: ইব্রাহীম রহমান বাবু। জেলার অবকাঠামো উন্নয়নে এই আসনে তার বাবা সাবেক এমপি মশিউর রহমানের অনেক অবদান থাকায় তিনি দলীয় প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ দিকে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এস এম মশিউর রহমান, এ আসনে দলীয় মনোনয়নের জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস (ছোট মজিদ) তারুন্যদিপ্ত নেতা হিসেবে দলে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তাই আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন, এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় ভাবে জোর লোবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর কে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গ্রামে-গঞ্জে ভোটরদের কাছে পরিচিতি এবং তাদের মন জোগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ আসনে কোন কারণে জামায়েত প্রার্থী পরিবর্তণ হয় সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আমীর শিবিরের সাবেক নেতা ও সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমানও জামায়াতের নেতা কর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ভোট গোছানোর কাজ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির পরিবর্তে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হলে এবং বিএনপি সক্রিয় কাজ না করলে জামায়াত এ আসনটি দখলে নিতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা। তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তারেক রেজা এ আসন থেকে লড়বেন বলে জানা গেছে। জামায়াতের সাথে নির্বাচনী ঐক্য না হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা প্রতীকে দলীয় একক প্রার্থী নিয়ে আগামী নির্বাচনে লড়তে পারেন দলটির জেলা সভাপতি এইচ এম মোমতাজুল করীম। এ আসনে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুণ্ডুতে তাদের কিছু নিজস্ব ভোটার রয়েছে এবং তারা নতুন ভোটারদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
এই আসনে বাম জোটের পক্ষে ভোটারদের তেমন সাড়া না থাকলেও জুলাই আন্দোলনে বাম ছাত্রফ্রন্টের ভাল অবদান ছিল। জাতীয় সংসদে বাসদের একক প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জান নির্বাচন করবেন বলে জানাগেছে।
দলীয় ভাবে যদি কোন জোট বা মোর্চা তৈরী না হয়, তাহলে প্রার্থী যেই হোক এ আসনে মূলত বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই হতে পারে ভোটের লড়াই।